আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন) অব্যাহতি নিয়েছেন তার দায়িত্ব থেকে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এর আপন ছোটভাই। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও।
 

১৯ নভেম্বর (রবিবার) আল-আমিন চৌধুরী সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দুপুরে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এরপরেই বিকেলে উনার পক্ষে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
 


এবিষয়ে আল-আমিন চৌধুরীর মন্তব্য জানতে চাইলে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
 

এব্যাপারে শাল্লা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট দিপু রঞ্জন দাশ বলেন, “আল-আমিন চৌধুরী ঢাকায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন কিন্তু কোন পদে ছিলেন কিনা জানিনা। পরবর্তীতে জাতীয় নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাতধরেই শাল্লায় রাজনীতিতে আসেন এবং উনার নিজ কর্মদক্ষতায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। যেমন, শাল্লা ও আটগাঁও ইউনিয়নে ৮০% লোক ছিল জামায়াত ও বিএনপি পন্থী কিন্তু আল-আমিন চৌধুরী দায়িত্বে আসার পর ঐ জায়গাগুলোতে ভোট সমান সমান হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম কমিউনিটি ও হিন্দু কৈবর্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভোট বাড়ছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন পেতে পুলিশ প্রধানের (আইজিপি) ভাই হিসেবে গ্রীণ সিগন্যাল পেয়েছে এটা বিশ্বাস করি না। মনোনয়নে পুলিশ প্রধানের (আইজিপি) কোন হস্তক্ষেপ নেই। উনি আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক হিসেবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অবদানেই উনি মনোনয়ন পেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী যদি আল-আমিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেন তাহলে স্মার্ট নেতৃত্ব তৈরীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করব।”
 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আল-আমিন চৌধুরী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন কিনা জানেন না। তারপরেও উনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। কিন্তু দলীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে ও সাংগঠনিকভাবে জনমনে রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ!
 

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, “বর্তমানে আল-আমিন চৌধুরীর সাথে যারা আছেন অধিকাংশই হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের লোক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন যে উনি এমপি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন একমাত্র সম্বল তার আপন বড়ভাই পুলিশের প্রধান (আইজিপি)। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই, দিরাই-শাল্লার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ও উন্নয়নকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজন একজন যোগ্য ব্যক্তি।”
 

এবিষয়ে শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মিয়া জানান, “আল-আমিন চৌধুরীর বাবা মান্নান চৌধুরীর সাথে আমরা রাজনীতি করেছি। তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক সত্যি, কিন্তু ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছে বলে আমার জানা নেই। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলকে গোছানোর মতো তার সাংগঠনিক দক্ষতা নেই। প্রকৃত আওয়ামীলীগের ত্যাগী লোক তার সাথে নাই। যারা আছেন কয়েকজন আওয়ামী লীগের তরুন আর বাকিসব বিএনপি মতাদর্শের। আল-আমিন চৌধুরী মানুষের আশানুরূপ সফলতা এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উনি এখন যে সাহস করে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন, একমাত্র সাপোর্ট ও শেল্টার তার আপন বড়ভাই পুলিশের প্রধান হিসেবে। আমি চেয়ারম্যান এখন আমার প্রতি যদি মানুষের আস্থা না থাকে তাহলে হবেনা। এই হাওরাঞ্চল দিরাই-শাল্লা হচ্ছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এলাকা যেখান থেকে উনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। আর উনারই সুযোগ্য সহধর্মিণী ড.জয়াসেন গুপ্তা একদম ক্লীন ইমেজের ও অত্যন্ত বিনয়ী, শিক্ষিতা মহিলা যার আচরণের মানুষ মুগ্ধ। এই আসনের বেশিরভাগ মানুষ ড. জয়াসেন গুপ্তাকে চায়, এবং জয়াসেন গুপ্তা থাকলে হিন্দু-মুসলিম কেউ বিপদে পড়বে না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট এলাকাবাসীর পক্ষে বিনীত প্রার্থনা ড. জয়াসেন গুপ্তাকে নৌকা প্রতীক দিলে অবশ্যই বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আপনার হাতকে শক্তিশালী করে এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবে।”


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-৪৩১