২১ নভেম্বর দেশের প্রথম পাক হানাদার মুক্ত এলাকা জকিগঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যখন তুমুল যুদ্ধ চলছিলো ঠিক এর আগেই জকিগঞ্জ উপজেলাকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাগণ হানাদার মুক্ত করে বিজয় উৎসব উদযাপন করেছিলেন।
 

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শত্রুমুক্ত এলাকা হিসেবে প্রতিবার এ দিনকে জকিগঞ্জে মুক্তাঞ্চল দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। কিন্তু এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম মুক্তাঞ্চলের মর্যাদা মেলেনি। স্বীকৃতির দাবীতে এবারও জকিগঞ্জ মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটি নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
 


মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও সূধীবৃন্দ উপস্থিত হয়ে ১০ টায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ১০ টা ১৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡রে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন করা হয়।
 

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল, মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, ব্রিটেনের কমিউনিটি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, মুক্তিযোদ্ধা সুনা মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, পৌরসভা আওয়ামী লীগ আব্দুল গণি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএজি বাবর, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমদ, প্রবাসী ফজলুর রহমান, সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শফিউল আলম মুন্নাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এরপরও সকাল সাড়ে ১০ টায় মুক্তিযোদ্ধা চত্ত¡র থেকে আনন্দ র‌্যালি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
 

দুপুরের দিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মিলানায়তনে ব্রিটেনের কমিউনিটি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শফিউল আলম মুন্নার সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
 

এতে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাছাড়াও দিনটি উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা জকিগঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যখন বড় ধরণের যুদ্ধ চলছে ঠিক তখনই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী ধরে জকিগঞ্জ শত্রু মুক্ত করে গৌরব উজ্জল অধ্যায় রচনা করেন।
 

জকিগঞ্জেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় উৎসব উদযাপন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৮ নভেম্বর জকিগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু আজও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে পাওয়া যায়নি তা কষ্টদায়ক। স্বীকৃতির দাবীতে জকিগঞ্জের সর্বদলীয় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
 

বক্তারা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস যাচাই-বাছাই করুন। জকিগঞ্জ প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা হিসেবে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ না করলে ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাবে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
 

স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার বই পুস্তকে জকিগঞ্জের শত্রুমুক্ত হওয়ার ইতিহাস সংযোজন ও প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপন করতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানানো হয়।

 

উল্লেখ্য, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২১ নভেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় জকিগঞ্জ উপজেলাকে পাক হানাদার মুক্ত করে বিজয় উৎসব উদযাপন করেন মুক্তিযোদ্ধাগণ। পাকসেনাদের হাতে বন্দি হওয়া লোকজনকে জকিগঞ্জ থানা থেকে মুক্ত করেন। জকিগঞ্জকে শত্রু মুক্ত করার যুদ্ধে অংশ নিয়ে বর্বর পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর মেজর চমন লালসহ তাঁর অপর আরও দুই সহযোগী। মহান মুক্তিযুদ্ধে জকিগঞ্জ ছিল ৪ নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। অধিনায়ক ছিলেন মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত। প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন এই সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। ৬টি সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব রব সাদী, লে. জহির উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন এম.এ.রব। ২১ নভেম্বর বিজয়ের প্রভাতে স্বাধীনতার নিঃশ্বাস নেয়া এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দাবী ‘জকিগঞ্জকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়’।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/হাছিব/এসডি-৪৮০