তফশিল ঘোষণার পর সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে জোরেশোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। দলীয় মনোনয়নের আশায় আওয়ামী লীগ নেতারা এখন ঢাকামুখী। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়ে তারা এখন ব্যস্ত দলীয় তদবিরে। বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বার্ধক্যজনিত কারণে এবার নির্বাচন করবেন না -এমনটা প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় আসনটিতে প্রার্থী বদলের হাওয়া লেগেছে।
দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আসনটি এবারও ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশাবাদী জাতীয় পার্টি। ফলে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও কেন্দ্রে চালিয়ে যাচ্ছেন চেষ্টা তদবির।
গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনটি মহাজোটের জন্য উন্মুক্ত ছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টি থেকে মো. সেলিম উদ্দিন প্রার্থী হন। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন হাফিজ আহমদ মজুমদার। আর জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনের অবস্থান ছিল তৃতীয়।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার প্রার্থী হচ্ছেন না এমনটা প্রায় নিশ্চিত। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এবার নির্বাচন করতে আগ্রহী নন বলে তার ঘনিষ্টজনদের জানিয়েছেন। নতুন কোন মুখই হবেন নৌকার কান্ডারি, এমনটা প্রায় নিশ্চিত। এতে উজ্জীবিত মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ও তাদের কর্মী সমর্থকরা।
সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোশতাক আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল কবীর, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাওসার চৌধুরী এবং তাসলিমা খানম, মো. খসরুজ্জামান, ফখর উদ্দিন আলী আহমদ।
এর মধ্যে মাসুক উদ্দিন আহমদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে আসনটি মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হলে প্রার্থী হন মো. সেলিম উদ্দিন। ফলে দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন মাসুক উদ্দিন। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মাসুক উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকেট পান রেডক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ড. আহমদ আল কবীরও গেল দু’বার দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামাগোত উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন প্রচারসহ গণমুখী রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় থাকায় ভোটারদের মধ্যে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোশতাক আহমেদও এর আগে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। গেল সিটি নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে প্রশংসা কুড়ান।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা কাওসার আহমদ চৌধুরী রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তরুণ নেতাকর্মীদের পছন্দে রয়েছেন। এলাকায় হাসপাতাল ও স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এদিকে, আর জাতীয় পার্টি থেকে এবার আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শাব্বীর আহমদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দীন খালেদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য এম. জাকির হোসেইন।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনরত বিএনপির কোন প্রার্থীই নির্বাচনমুখী তৎপরতায় নেই। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আসনটি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / শাদিআচৌ / ডি.আর