দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৪৮ নেতা-কর্মী দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রবাসী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও আছেন। রয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয়রাও।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ১৯টি আসনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৬ প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। বাকি তিনটি আসনের মধ্যে সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) থেকে গণফোরামের মোকাব্বির খান, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) থেকে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) থেকে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের ১৪৮ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাঁদের অন্তত অর্ধেক দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও ভবিষ্যতের পথ সহজ করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। বাকিরা মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন। কিছু কিছু আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যদের চিন্তা বাড়িয়েছেন এসব আগ্রহী প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, এবার একাধিক বর্তমান সংসদ সদস্যের কপাল পুড়তে পারে। একাধিক সংসদ সদস্যের বদলে চমক হিসেবে দলীয় প্রার্থীর তালিকায় নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা আছে। এমনটা হলে অনেক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যও বাদ পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দুজন নেতা দুটি করে আসনে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) ও মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁদের সমর্থকেরা জানান, দুটো আসনেই তাঁদের পরিচিতি রয়েছে। তাই যেকোনো একটি আসনে তাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার আগ্রহ থেকেই দুটো আসনে মনোনয়নফরম জমা দেন।
এদিকে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনিসহ মোট তিনজন এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দেন। অন্য দুজন হচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, গতবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। এবারও চেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তৃণমূল থেকে নিয়ে গিয়ে দলীয় সভাপতি তাকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা বানিয়েছেন। দলের সঙ্গে কখনো বেইমানি করেননি। তাই দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেবেন।
গত সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের ১৬ প্রার্থীর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। পরে উপনির্বাচনে এখানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ-দলীয় প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার ছাড়া আওয়ামী লীগের বাকি ১৫ জন সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।
যোগাযোগ করলে সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ। বয়স ৯০ বছর পার হয়েছে। আর কত? তাই মনোনয়ন চাইনি। তবে সবার জন্য শুভকামনা রইল।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ প্র.আলো/ নাজাত