দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর সিলেট আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে নতুন হিসেব-নিকেশ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দলের বাধা না থাকায় মনোনয়নবঞ্চিত অনেকেই নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করছেন। মনোনয়নবঞ্চিতরা ‘জোটবদ্ধ’ হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানোরও পরিকল্পনা চলছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সিলেটের বিভিন্ন আসনের মনোনয়নবঞ্চিতরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করেছেন। এছাড়া কয়েকজন মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। বিভাগের যেসব সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন পাননি তারাও স্বতন্ত্র ব্যানারে নির্বাচন করবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন সিলেট বিভাগের ১৪৮ জন নেতা। গত রবিবার দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ১৯ আসনের মধ্যে প্রার্থী বদল হয় ৮টিতে। বাদ পড়েন বর্তমান ৬ সংসদ সদস্য। তবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে শেখ হাসিনা নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। প্রয়োজনে দলের ডামি প্রার্থী রাখতে বলেছেন তিনি। এছাড়া কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের কোন আপত্তি নেই এমন ঘোষনাও দেন শেখ হাসিনা।
দলীয় সভানেত্রীর এমন ঘোষণায় মনোনয়নবঞ্চিতরা আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। নৌকার টিকেটধারী দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করতে মনোনয়নবঞ্চিতরা একট্টা হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সিলেট-৩, ৫ ও ৬ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত কয়েকজন নেতা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন। বঞ্চিতদের মধ্য থেকে কাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করা যায় এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
সিলেট বিভাগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে বাদ পড়েছেন সিলেট-৫ আসনের হাফিজ আহমদ মজুমদার, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়া সেনগুপ্ত, মৌলভীবাজার-৩ আসনে নেছার আহমদ, হবিগঞ্জ-১ আসনে দেওয়ান শাহনওয়াজ গাজী (মিলাদ গাজী) ও হবিগঞ্জ-২ আসনের আবদুল মজিদ। এর মধ্যে হাফিজ মজুমদার দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন চাননি। সূত্র জানিয়েছে বাদ পড়া বাকি সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার চিন্তাভাবনা করছেন। নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীরাও প্রার্থী হতে চাপ দিচ্ছেন।
এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যের মধ্যে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের আসনগুলোতেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। ইতোমধ্যে কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ মাঠে নেমে এলাকার লোকজন ও নেতাকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় শুরু করে দিয়েছেন।
সিলেট-১ ও ৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ দুটি আসনে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছিলেন। গতকাল সোমবার তিনি ফেসবুকে সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে একটি পোস্ট দেন। নির্বাচন নিয়ে তার মতামত জানতে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ফেসবুকের পোস্ট দিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরপরই সিলেট-৬ আসনে কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন, হবিগঞ্জ-৪ আসনে যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন (ব্যারিস্টার সুমন) ও সুনামগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জম হোসনে রতন নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনজনই এলাকায় মতবিনিময় করে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ