হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে ধীরগতিতে উদ্বিগ্ন কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।
 

সোমবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাঁধ নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে বোরো ফসলের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সংগঠনটি।  নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন না হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুঁশিয়ারী প্রধান করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।



সংবাদ সমম্মেলনে চলমান বাঁধ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও সরজমিন তথ্য তুলে ধরে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।
 

সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলনের সঞ্চলনায় এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি চিত্ত¡রঞ্জন তালুকদার, সুকেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদনূর আহমেদ, সদস্য আলীনূর, ইসমাইল মিয়া প্রমখু।
 

এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭৩৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ি অর্থবছরের ১৫ ডিসেম্ব বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা থাকলেও  নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ মাস থেকে দেড় মাস পরে কাজ শুরু করা হয় অনেক প্রকল্পে। বিলম্বে পিআইসি গঠন ও সময় মতো কাজ শুরু না করতে পারায় বাঁধ নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি পিছিয়ে যায়।
 

অন্যান্য বছরের মতো এবারও পিআইসি গঠনে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কৃষককে প্রাধান্য না দিয়ে নীতিমালা লঙ্গন করে অকৃষকদের নামে পিআইসি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। গণশোনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রতিপালন হয়নি। ৩ শতাধিক প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাঁধ নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অক্ষতবাঁঁধে পূর্ণ বরাদ্দ, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ বেশি, অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গঠনসহ হাওরের কাজে আসবে না এমন স্থানে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারে টাকা অপচয়, হাওরের টাকায় গ্রামের রাস্তা, বালিমাটি দিয়ে বাঁধ তৈরী, বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন, দুর্মজ বা কম্পেশন না করা, পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ তৈরীসহ বাঁধের কাজে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয় । পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের দাবি অনুযায়ি চলতি মাসের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাঁধের কাজের অগ্রগতি ৬৭ ভাগ উল্লেখ করা হলেও এই তথ্য বাস্তব সম্মত নয় বলে উল্লেখ করেন সংগঠনের নেতারা।
 

সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, জেলার শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর, শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ধীরগতিতে বাঁধের কাজ হচ্ছে। জেলার অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার উন্মুক্ত রয়েছে। অনেক বাঁধে সবেমাত্র মাটির কাজ শুরু হয়েছে। স্লোভ, দুরমুজের কাজ হয়নি, অনেক ক্লোজার বা ভাঙ্গায় বাঁশ, বস্তা, ছাটাই বসানো হয়নি। সংগঠনের মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে বাঁধের কাজের সার্বিক  ৪০ ভাগের কাছাকাছি। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হবে মনে করেন তারা । দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে গিয়েও বাধের কাজের গুণাগুণ বজায় রাখা সম্ভব হবেনা। এতে ফসল ঝ‚কির মুখেই থাকবে। অবিলম্বে হাওরের কৃষকদের ফসল ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহবান জানানো হয়।
 

দায়িত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযতভাবে কাজ সম্পন্ন করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তাগিদ সংগঠনটির। বাঁধ নির্মাণকাজের তদারকি জোরদার করা, র্নিধারিত সময় ২৮ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা।, যে সকল পিআইসির বিরুদ্ধে বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে তা তদন্ত করা। কাজ অনুযায়ি যথাসময়ে অর্থ ছাড় দেয়া  ও অপ্রয়োজনীয় পিআইসির বরাদ্দ বাতিল করা , ঝ‚কিপূর্ণ ক্লোজারগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা ও সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা।, অপ্রয়োজনীয় ও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত যেসব বাঁধে সমান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পোস্ট ওয়ার্কের সময় যতাযতভাবে কাজ অনুযায়ী বিল প্রদান করে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের অপচয় রোধ করা ,যেসব পিআইসি নীতিমালা ও প্রাক্কলণ অনুযায়ী কাজ করেছে বিল পরিশোধে তাদের হয়রানি না করাসহ এই ৭টি দাবি উপস্থাপন করা হয়।
 

নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ না হলে জেলাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচীর পাশাপাশি কৃষকদের সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুঁশিয়ারি প্রদান করে সংগঠনটি।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/শহীদনুর/এসডি-৮৭৫