প্রাকৃতিক সম্পদ তেল-গ্যাসে ভরপুর সিলেট অঞ্চলের মাটির নিচ। সিলেটে ৭ মাসে চার কূপে মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। সিলেটের ভূ-তল ‘তরল সোনায়’ ভরপুর হলেও অনেক ক্ষেত্রে এসবের সুফল ভোগ করছে না এ অঞ্চলের মানুষ।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ মে) সিলেটের গোলাপগঞ্জস্থ কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ডের নতুন একটি অনুসন্ধান কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। প্রেসার ঠিক থাকলে এই কূপ থেকে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে এই গ্যাস হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা জানান- খনন কাজ শুরু হওয়ার সাড়ে ৪ মাসের মাথায় শুক্রবার সকাল থেকে কূপটিতে ফ্লো শুরু হয়। শনি ও রবিবার এই পরীক্ষা চলমান থাকবে।
সিলেটে আরেকটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। কৈলাশটিলার ৮নং কূপে গ্যাস পাওয়ার কথা জানিয়েছে
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কৈলাশটিলার ৮নং কূপে গ্যাস পাওয়া গে্যেছ। গত বছরের জানুয়ারি থেকে কূপটিতে খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। কূপের ৩ হাজার ৪৪০ থেকে ৫৫ হাজার ফুট গভীরতায় গ্যাস পাওয়া গেছে। এখন দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন হচ্ছে। ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ উত্তোলন শুরুর আশা রয়েছে। এ নিয়ে সাত মাসে সিলেটে চারটি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিললো।
জানা যায়, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের উৎপাদনে থাকা কূপগুলো থেকে এখন প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চলতি বছরের মধ্যে আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে তারা উৎপাদনকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে যেতে চায়। আর সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সকল কাজ শেষ করতে পারলে শুধু এই কোম্পানি থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের গত ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রশিদপুরের ২নং কূপে গ্যাসের নতুন স্তরের সন্ধান মেলে। যার পরিমাণ প্রায় ১৫৭ বিলিয়ন ঘনফুট। তারও আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর দেশের সবচেয়ে পুরোনো গ্যাসক্ষেত্র সিলেটের হরিপুরের ১০ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মেলে। কূপটিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ। আর ২২ নভেম্বর সিলেটের কৈলাশটিলায় পরিত্যক্ত ২নং কুপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে। এরপর আবিষ্কার হতে থাকে একের পর এক গ্যাসক্ষেত্র। বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলো হলো- সিলেটের হরিপুর গ্যাসফিল্ড, হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসফিল্ড, সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসফিল্ড এবং সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাসফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাসফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাসফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর মধ্যে ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
জানা যায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে দেশের ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এতে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এসজিএফএল-এর আওতাধীন ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের কাজ চলছে। সিলেটের ১৪ কূপের মধ্যে খনন কাজের পর ২০২২ সাল থেকে তিনটি এবং ২০২৩ সালে আরও একটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
২০২২ সালে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ এই তিনটি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করা হয়। এসব কূপ থেকে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে, সিলেটের নিচ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন হলেও এর খুব বেশি সুফল ভোগ করছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবি সিলেটবাসীর।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর / মাহি