যেসব আইনি সেবায় রাষ্ট্রীয় আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় সেগুলোতে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সুযোগ করে দিল ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিল। এর আগে শুধু ফরাসি নাগরিক এবং নিয়মিত অভিবাসীরাই এই সুবিধা পেয়ে আসছিলেন।
২৯ মে সাংবিধানিক কাউন্সিলের নয় জন বিচারক অনিয়মিত অভিবাসীদের আইনি সহায়তার পাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার এই রায় দিয়েছেন। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত ফ্রান্সে পাস হওয়া আইনগুলো সংবিধানের প্রবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করে থাকে।
সাংবিধানিক কাউন্সিলের রায়ে বলা হয়েছে, যে বিধানটি সাংবিধানিক কাউন্সিলের নজরে আনা হয়েছে, তার কারণে সংশ্লিষ্ট বিদেশিরা ফ্রান্সে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একজন আইনজীবীর অধিকার বঞ্চিত হয়ে আসছিল।
আদালত বলছে, স্পষ্টতই এমন বিধান ফরাসি সংবিধান বিরোধী৷ ফরাসি বিচার ব্যবস্থায় অভিবাসী ও অনিয়মিত অভিবাসীরা সমান।
ফ্রান্সে বসবাসরত নিয়মিত অভিবাসীরা এবং ফরাসি নাগরিকেরা শ্রম এবং দেওয়ানি আদালত সম্পর্কিত আইনি বিষয়ে নিজেদের আর্থিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে আইনজীবীর ফি পরিশোধ করতে রাষ্ট্রীয় অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
সাংবিধানিক কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে ফ্রান্সে বসবাসকারী অনথিভুক্তদের জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ আদালতের এই সিদ্ধান্ত ২৯ মে সন্ধায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় অফিসিয়াল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ফরাসি বিচার ব্যবস্থায় প্রুদহোম বা শ্রম আদালত নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারীর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিসহ নানা আইনি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়৷ এছাড়া দেওয়ানি বিষয় দেখভাল করে সিভিল ট্রাইব্যুনাল।
তিন জন অভিবাসীর হয়ে ফরাসি আইনজীবী জাভিয়ের কোর্তেই অনথিভুক্তদের সহায়তার বিষয়টি সাংবিধানিক কাউন্সিলের নজরে আনেন।
যে আইনি সহায়তা :
ফ্রান্সে আইনি সহায়তা বা ‘এইদ জুরিডিকশিওনেল’ এমন লোকদের জন্য প্রযোজ্য যারা আদালতে একজন আইনজীবী নিয়োগ করতে চান কিন্তু প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতার কারণে পেরে উঠেন না।
ফরাসি রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিস্থিতি বিবেচনায় এই খরচগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বহন করে৷ আবেদনকারীরা অবশ্য সরাসরি কোন অর্থ পান না। রাষ্ট্র সরাসরি তাদের আইনজীবী অথবা বিশেষজ্ঞকে এই ফি দিয়ে থাকে।
এটি পেতে একজন ব্যক্তিকে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনকারীর অবশ্যই ‘আম্পু’ বা নিয়মিত আয়কর দেয়ার প্রমাণ থাকতে হবে, যাতে করে তার আয় দেখে আইনি সহায়তার অর্থ পরিমাপ করা যায়।
এছাড়াও আবেদনকারীকে নিয়মিত ফ্রান্সে থাকার প্রমাণ এবং আয়সীমা নির্ধারিত স্তরের নীচে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
১৯৯১ সাল থেকে ফ্রান্সে অবস্থানরত অভিবাসীরা ফৌজদারি ব্যাপারে আইনি সহায়তার সুবিধা পাচ্ছেন। আগে এটি শুধু ফরাসি নাগরিকদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া ফ্রান্সে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তর অফপ্রা থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার পর জাতীয় আশ্রয় আদালতে (সিএনডিএ) আবেদনের ক্ষেত্রে আইজীবীর নিয়োগে অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
তবে প্রত্যাখাত আশ্রয়প্রার্থীরা পরবর্তীতে অনিয়মিত হয়ে পড়লে আর কোনো আইনি সহায়তার সুযোগ পেতেন না৷ ক্ষেত্র বিশেষে কিছু অনিয়মিত অভিবাসী সেটি পেলেও তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। সাংবিধানিক কাউন্সিলের রায়ের পর এখন থেকে অনথিভুক্তরাও নিয়মিতদের মতো বিভিন্ন আইনি জটিলতায় আইনজীবীর ফি দিতে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
ফরাসি গণমাধ্যম মিডিয়াপার্ট জানায়, সাংবিধানিক কাউন্সিলে আইনজীবী জাভিয়ের কোর্তেই প্রথম দিকে পাঁচজন আবেদনকারীর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে তিন জন আবেদনকারীর হয়ে তিনি আদালতে লড়েছিলেন। একজন আবেদনকারী মাঝপথে সরে দাঁড়ান এবং অন্যজন ব্যতিক্রমীভাবে আইনি সহায়তা পাওয়ায় তাকে আর আবেদনকারীদের তালিকায় রাখা হয়নি।
জাভিয়ের কোর্তেই মিডিয়াপার্টকে বলেন, ‘‘অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা একজন বিদেশি ক্ষেত্রে বিশেষে ব্যতিক্রমী উপায়ে আইনি সহায়তা পেতেন। আমাদের আওতায় থাকা চার জনের মধ্যে মাত্র একজন ব্যক্তি অর্থ সহায়তা পেয়েছিলেন। যার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে পূর্বের আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রকৃতির চিত্র উঠে আসে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ইনফো-মাইগ্রেন্টস / ডি.আর/ এনএফ