সিলেটের ওসমানীনগরে কোনো ধরনের চিকিৎসার প্রশিক্ষণ ছাড়াই একজন কম্পাউন্ডার ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন চাতলপাড় জামিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই আল হাদি। ডাক্তার হিসাবে রোগী দেখেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থীসহ কম্পাউন্ডার পল্লি চিকিৎসক দাবিদার জুবায়ের আল-মখসদ।
জানা গেছে, রবিবার উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের সুন্দিকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে মেডিক্যাল ক্যাম্প। অভিজ্ঞ ডাক্তারদের দিয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হবে বলে প্রচার করলেও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় এক কম্পাউন্ডার। মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখে অনেকেই চিকিৎসা সেবা না নিয়ে ফিরে আসেন।
তবে, যারা চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং ঔষধ সেবন করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একজন ফ্রান্স প্রবাসীকে ম্যানেজ করে অর্থ এনে মেডিক্যাল ক্যাম্পের নামে এমন কর্মকান্ডের সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা করিয়ে ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই আল হাদি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা না করে বৈধ ডাক্তার ছাড়াই সাধারণ মানুষের জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করায় স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঔষধ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় রোগীদের ভূল ঔষধ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সুন্দিকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মেডিক্যাল ক্যাম্প করার বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতি লাল গুপ্ত বলেন, মাদ্রাসার একজন শিক্ষক রবিবার সকালে আমাকে মেডিক্যাল ক্যাম্পের বিষয়টি অবগত করে পানি বৃদ্ধির কারণে সুন্দিকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করার কথা জানালে আমি বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলেছি। সেখানে অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া চিকিৎসা সেবা দেয়ার বিষয়টি আমার অজানা। রবিবার বিদ্যালয় বন্ধ ছিল না, যথারীতি ক্লাস চলমান ছিল। তবে, ছবি এবং ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের ক্লাসেই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়ের বেঞ্চ-টেবিল ব্যবহার করা হয়েছে। এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সাদিপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া বলেন, অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে সুন্দিকলায় মেডিক্যাল ক্যাম্প হবে এমন বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছিলাম। তবে, পরে জানতে পেরেছি সেখানে কোনো ডাক্তারই ছিলেন না। মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং একজন কম্পাউন্ডার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এ ধরনের চিকিৎসা সেবা হাস্যরস তৈরি করেছে। মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবায় এ ধরনের কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ডাক্তারি প্রশিক্ষণ ছাড়া কম্পাউন্ডার ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্পের পরিচালনা, ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ প্রদানের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা:ময়নুল হাসান।
রবিবার বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এমন মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষাকর্মকর্তা সানাউল হক সানি।
এই বিষয়ে জানতে চাতলপাড় জামিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা দেয়নি। একজন পল্লী চিকিৎসক সেবা প্রদান করেছেন। বন্যার্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা, আমি মনে করি এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী জুবায়ের আল-মখসদ বলেন, আমি মনে করেছি এখানে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা প্রদান করবেন, আমি সহায়ক হিসাবে থাকবো। কিন্তু সেখানে কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন না, তাই চিকিৎসা করেছি। যদি সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকে তবে, এটি ভুল হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/রনিক/এসডি-৫২৪১