সিলেটে সোমবার (১৭ জুন) ভোররাত থেকে ঝরছে অবিরাম বৃষ্টি। এতে মহানগরসহ পুরো সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জলে ভেসে গেছে সিলেটবাসীর ঈদ আনন্দ। 

 



এরই মাঝে পাওয়া গেলো আরও দুঃসংবাদ। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী- আগামী ২৪ হতে ৭২ ঘণ্টায় সিলেট অঞ্চলে এর উজানে এবং ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

 

 

এছাড়া আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা, ঝালুখালি, মনু-খোয়াইসহ সিলেট বিভাগের সকল নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অনেক স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এবং মৌলভীবাজার জেলায় স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

 


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সোমবার দুপুর পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৮৫ মিলিমিটার ও  সুনামগঞ্জে ৩৬৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

 


আর উজানের চেরাপুঞ্জিতে (মেঘালয়) ১২৬ মি.মি, শিলিগুড়িতে (পশ্চিম বঙ্গ) ১২৬.৮ মি.মি, কোচবিহারে (পশ্চিম বঙ্গ) ৯২ মি.মি, গোয়াহাটিতে (আসাম) ৭০ মি.মি, শিলচরে (আসাম) ৬৮ মি.মি এবং তেজপুরে (আসাম) ৪৭ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

 


ঈদের দিন বিকাল পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

 


পাউবো-এর সিলেট কার্যালয়ের বিকাল ৩টার তথ্য অনুযায়ী- সিলেটে ৩টি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহী হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

 


তবে সকালে ৩ নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে ছিলো। ওই সময় সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও  সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। 

 


দুপুরের পরে সারির পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও সিলেটের আর সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

 


সিলেটে ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট।

 


রবিবার (১৬ জুন) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে- জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। তবে সোমবার ভোররাত থেকে সিলেটে ঝরছে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে নামছে উজানের ঢল। ফলে সোমবার সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। এছাড়া  সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়েছে পানিতে।

 


এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আযহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া শাহী ঈদগাহে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লক্ষ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন মাত্র কয়েক হাজার।

 


এদিকে, বাসবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পনি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কুরবানিদাতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। অনেকে কুরবারিন পশু দুতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কুরবানি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অনেকে। অনেকে বলছেন- দু-একদিন পরে কুরবানি দিতে হতে পারে। 

 

 
সকালে  সিলেট মহানগর ঘুরে দেখা গেছে- নিম্ন সব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

 


এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে উঠেছে পানি। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কোমর পর্যন্ত পানি। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষজন। 

 

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম