বাড়ির সবাই যখন নিকটজনের জানাজায়, ঠিক ওই সময়ে উপজেলা প্রশাসনের একদল লোক বাড়িটির রাস্তায় স্থাপিত পাকা সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেছে। জানাজা শেষে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাড়ির লোকজন তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ ব্যাপারে কিছু না জানার কথা বলেছে। তবে সাইনবোর্ডটি পূণঃস্থাপনের উদ্যোগ নিলে তারাই আবার বাধাও প্রদান করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

 


গত বুধবার (১০ জুলাই) এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে গোলাপগঞ্জ উপজেরার সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে।
আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত প্রতিশোধ স্পৃহা, এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ইঙ্গিতেই এটা করা হয়েছে বলে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন ওই বাড়ির অন্যতম অংশীদার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ।

 


তিনি জানান, তার পূর্বপুরুষ মিয়া খানের গোলাপগঞ্জ উপজেলার শেরপুর মৌজার ৭৩২৭ নম্বর তালুকের ভূমির সাথে এস এ ১৫১/৯২৮ বিএম ১০০০ দাগ এবং এস এ ৯৫২ বিএস ১০৬৮ দাগে দ্বিতীয় তফসিলে ০.৪০ একর রাস্তা রয়েছে, যা বংশ পরম্পরায় বাড়ির লোকজনের চলাচলের সড়ক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিগত এসএ ও বিএস জরিপে বাড়ির নিজস্ব রাস্তাটি সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত হওয়ার খবর জেনে মৌলভী জহুরুল হক চৌধুরীসহ ১০১ জন বাদী হয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ ৫জনকে বিবাদী করে সিনিয়র সহকারী জজ গোলাপগঞ্জ আদালতে গত বছরের ২০ একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেন।

 


মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, যুগ যুগ ধরে এ রাস্তাটি মিয়া খান তালুকের উত্তরাধিকারা নিজস্ব রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করছেন। সরকারি কোন সহায়তা এ রাস্তায় লাগেনি। ২০০১ সালে বাড়ির লোকজনের আর্থিক সহায়তায় রাস্তাটি পাকাকরণ, একপাশে বিশ্রামের জন্য পাকা বেঞ্চ ও রাস্তার প্রবেশদ্বারে ‘বাড়ির নিজস্ব রাস্তা’ লেখা সম্বলিত একটি পাকা সাইনবোর্ড বসানো হয়। ২০০৭ সালে একইভাবে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। এ রাস্তা নিয়ে অতীতে কেউ কোনো তুলেন নি। মামলাটি এখনো আদালতে চলছে।
জাবেদ চৌধুরীর অভিযোগ, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে রোষ্ট হয়ে নিজের প্রতিশোধ স্পৃহা নিবৃতে উপজেলা চেয়ারম্যানের ইঙ্গিতেই প্রশাসন এমন হয়রানিমূলক কাজ করছে। তিনি জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। 

 

 


তার প্রত্যাশা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে যুগ যুগ বিদ্যমান তার বাড়ির নিজস্ব রাস্তার বিষয়ে সুষ্ঠু এবং সুন্দর সমাধান করবে উপজেলা প্রশাসন।
তবে জাবেদ চৌধুরীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধূরী এলিম।

 


এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বাড়ির সাইনবোর্ড ভাঙার ইসারা দেয়ার মতো মানুষ আমি না। বিষয়টি আমার সঙ্গে যায়না। আমকে যারা জানেন, তারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। এটা প্রশাসনের ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন, অতীতে তাদের প্রতিবেশির সঙ্গে বিরোধ মিমাংসার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করেছি। কয়েকটি বিষয় সমাধানও হয়েছে। 

 


এ ব্যাপারে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন গোলাপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন।

 


তিনি বলেন, বিষয়টি মোবাইলে একজন আমাকে জানিয়েছেন। আগামী বুধবার আমি সরজমিনে পরিদর্শণ করে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 


গোলাপগঞ্জ উপজেলার সহকারি ভূমি কর্মকর্তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর