নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধারের পাশাপাশি আন্ত:জেলা গরু চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বড়লেখা থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিবাগত রাতে সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ৫ চোরই গরু চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

এর মধ্যে ৪ জন শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে ও একজন গত শুক্রবার বিকেলে জবানবন্দি দিয়েছে। বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে তারা এই জবানবন্দি প্রদান করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।


গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- নবীগঞ্জ উপজেলার ছালামতপুর গ্রামের আব্দুল খালিক মিয়ার ছেলে মো. তাজুল ইসলাম (৩৩), একই গ্রামের জজ উল্লার ছেলে মুহিব মিয়া (৩২), ছোট শাকুয়া গ্রামের আছির মিয়ার ছেলে আলিম উদ্দিন (৩০), পূর্ব পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল মনাফ বাবুর্চীর ছেলে জসিম উদ্দিন (২২) ও ছালামতপুর গ্রামের হবিব উল্লার ছেলে সাহেদ আহমদ (২৬)।

এদিকে বড়লেখার শাহবাজপুরে  ভারত থেকে চোরাই পথে আনা ২টি গরুসহ চেরাগ আলী (৫০) নামের এক চোরকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ভোররাতের দিকে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গাংকুল গ্রামের রাছনা বেগমের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে ৩টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে বাড়ির লোকজন বুঝতে পারেন তাদের ঘরের দরজা বাইরের দিক থেকে বন্ধ করা। পরে তারা দরজা ভেঙে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান গোয়ালঘরে রাখা ৬টি গরুর মধ্যে ৩টি গরু নেই। এরপর স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে গরগুলো না পেয়ে ওইদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে বড়লেখা থানায় অজ্ঞাতনামা চোরদের আসামি করে একটি মামলা করেন রাছনা বেগম। মামলার পরপরই বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্ত্তীর নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ও সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) উস্তার মিয়াসহ একদল পুলিশ সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন দিবাগত রাতে (২৫ জুলাই) ফেঞ্চুগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাজুল ইসলাম (৩৩), সাহেদ আহমদ (২৬) ও জসিম উদ্দিন (২২) নামের তিন চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে চুরি হওয়া ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৬ জুলাই বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রাদন করে। অন্যদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তাজুল ইসলাম (৩৩) ও সাহেদ আহমদ (২৬) চুরির ঘটনায় জড়িত কয়েকজন সহযোগীর নাম বলে। পরে পুলিশ তাদের দেওয়া তথ্যমতে গত ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার সহযোগিতায় মুহিব মিয়া (৩২) ও আলিম উদ্দিন (৩০) নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে বড়লেখার শাহবাজপুরে  ভারত থেকে চোরাই পথে আনা ২টি গরুসহ চেরাগ আলী (৫০) নামের এক চোরকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। গত ২৫ জুলাই উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় গরুগুলো উদ্ধার ও গরুচোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বড়লেখা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হচ্ছে- উপজেলা পাতন গ্রামের চেরাগ আলী (৫০), দৌলতপুর গ্রামের হান্নাই (৪৫), সায়পুর গ্রামের আবুল হোসেন (৪৫)।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী শনিবার বিকেলে বলেন, চুরির ঘটনাটি সম্পূর্ণ ক্লু-লেস। মামলার পরপরই তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ একটি চৌকস টিমকে অভিযানে পাঠাই। চুরির আনুমানিক প্রায় ৪৮ ঘটনার মধ্যেই ঘটনায় জড়িত পুরো টিমকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চুরি হওয়া ৩টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা আন্ত:জেলা গরুচোর চক্রের সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনই চুরির ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওসি আরও বলেন, তাদের (গ্রেপ্তার হওয়া চোর) নামে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা এবং সাজাসহ গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও রয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/লাভলু