ফাইল ছবি

দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ৪৪১ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটি নিয়ে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের সবাই পূর্ণ বেতনে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। কেউ দুই বছর, আবার কেউ চার বছরের জন্য এই ছুটিতে রয়েছেন। এরকম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের (শাবিপ্রবি) ১১৫ জন শিক্ষক বিদেশে রয়েছেন।

 


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্যসূত্রে এসব জানা গেছে। খবর কালের কণ্ঠ পত্রিকার।

 

ইউজিসি জানায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষাছুটিতে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫৫ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে বর্তমানে বিদেশে আছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি নিয়ে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৫ জন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ জন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ জন, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ জন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ জন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন। তবে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত কোনো পাওয়া যায়নি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষক ১৬ হাজার ৩৯৯ জন।

 

এছাড়াও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে বিদেশে রয়েছেন। সেই হিসাবে শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের হার ১৪.৮৮ শতাংশ। তবে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট কর্মরত শিক্ষকের ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষা ছুটিতে থাকা অনেক শিক্ষক আর দেশে ফেরেন না। কেউ কেউ ফিরে যোগদান করলেও কিছুদিন পর আবার বিদেশে চলে যান। তাঁদের প্রায় সবাই রাষ্ট্রের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি সূত্রে পরে আবার মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে বিদেশে যাওয়ারও সুযোগ পেয়েছেন। অথচ তাঁদেরই অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি-বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরে আর দেশে ফেরেন না।

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষকরা সাধারণত রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনের আনুকূল্য খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগেভাগে শিক্ষা ছুটি নেন। উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পছন্দের দেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ। যাঁরা এসব দেশে সুযোগ পান, তাঁরা একেবারে পরিবার নিয়েই যান। শিক্ষা ছুটির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন তাঁরা। ছুটির সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সুবিধা ভোগ করে শেষ পর্যন্ত আর দেশে ফিরে আসেন না।

 

সূত্র জানায়, শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে যাওয়া শিক্ষকরা পূর্ণ বেতনে একনাগাড়ে চার বছর ছুটি নিতে পারেন। এ সময় কারো ডিগ্রি বা গবেষণা শেষ না হলে আরো দুই বছরের অবৈতনিক ছুটি দেওয়া হয়। তবে নিয়ম হলো, চার বছর ছুটি ভোগের পর দেশে ফিরে কাজে যোগদান করতে হয়। এরপর দুই বছরের ছুটির জন্য আবার আবেদন করতে হয়। চার বা ছয় বছর ছুটি ভোগের পর কেউ যদি পদত্যাগ করতে চান, তাহলে তাঁকে ছুটির সময় নেওয়া সব অর্থ ফেরত দিতে হয়, অথবা ছুটির সমপরিমাণ সময় চাকরি করার পর নিতে হয় অব্যাহতি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ছুটিতে গিয়ে দেশে না ফেরা শিক্ষকরা সাধারণত টাকা ফেরত দেন না। শিক্ষকদের যাঁদের পরিবার রয়েছে তাঁরা শুরুতেই পরিবারসহ বিদেশে যান। ফলে তাঁদের পিছুটান থাকে না। ছুটি শেষ হলে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ই-মেইলের উত্তর দেন না। তাঁরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিই আর করবেন না বলে ঠিক করেন, তাই কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেন না।

 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান কঠোর না হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন শিক্ষা ছুটি শেষে দেশে ফিরে না আসা শিক্ষকরা। ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষকরা শিক্ষা ছুটিতে গিয়ে যদি দেশে না ফেরেন, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি ওই সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করতে না পারে তাহলে তা ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা। কারণ এখন অন্য দেশগুলো এ ব্যাপারে খুব সচেতন।  বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন। তবে আমাদের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার দুর্বলতার কারণে কেউ কেউ পার পেয়ে যাচ্ছেন।’

 

ড. মুহাম্মদ আলমগীর আরো বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে কত শতাংশ শিক্ষা ছুটি নিতে পারবেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। আমাদের একটি কমিটি এ ব্যাপারে কাজ করছে। আমার মনে হয়, এটা ২৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। আর এখন পিএইচডি ছাড়া মাস্টার্স প্রগ্রামে শিক্ষা ছুটি না দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর