সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি শনিবার (১০ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। 


রাষ্ট্রপতির কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিষয়টি বিকালে নিশ্চিত করেছেন, শাবিপ্রবির জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা।


 

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকল আবাসিক হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছে।

 
ওই দিন সকালে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। 

 
তার আগে বৈষম্যবিরোধী ইস্যুতে আন্দোলনরত শাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।


এদিকে শাবিপ্রবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: কবির হোসেন শিক্ষার্থীদের জন্য এক বার্তা দিয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, শিক্ষার্থীরা চাইলে তিনিও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।


প্রফেসর ড. মো: কবির হোসেনের বার্তা-
স্নেহভাজন শাবিপ্রবির ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, আমার শুভেচ্ছা নিও। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ যে সকল ছাত্রছাত্রী, সাধারণ জনগণ শহীদ হয়েছেন সে সকল বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমার স্নেহভাজন ছাত্রছাত্রীদের কিছু কথা বলতে চাই।

আমি শাবিপ্রবির প্রথম প্রভাষক হিসেবে প্রায় ৩৪ (চৌত্রিশ) বছর চাকুরীকালীন সময়ে দলমত নির্বিশেষ শাবিপ্রবির  একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার স্নেহভাজন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী দেশে/বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আমি সবার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করি। আমার শিক্ষকতা জীবনে যে সকল ছাত্র/ছাত্রীর ক্লাস পরীক্ষা নিয়েছি কিংবা নিজ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের সকল ছাত্র/ছাত্রী যে যেই ধরনের সমস্যা নিয়ে এসেছে তা সমাধানের চেস্টা করেছি ও সমাধান করেছি তা ছাত্রছাত্রীরাই আমার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে। 

গত ১(এক) বছর আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে ৪(চার) বছরের জন্য প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের পর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র  উন্নয়নমুলক  কাজের গুণগত মান যাচাই-বাছাই ও তদারকির দায়িত্ব পালন করছি। ফলশ্রুতিতে ১ (এক) বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি/মটরসাইকেল/বাই সাইকেল রাখার জন্য পার্কিং তৈরি, সমাজবিজ্ঞান ভবনের সম্মুখের রাস্তা তৈরি এবং অতি সম্প্রতি সমাজবিজ্ঞান ভবন থেকে প্রথম ছাত্রী হল হয়ে মেইন রোড পর্যন্ত হাঁটার এবং গাড়ি চলার রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া শাহপরান হল থেকে মেইন গেইট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, হ্যান্ডবল গ্রাউন্ড ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মাটি ভরাট করে ব্যবহারের উপযোগী করা এবং শাবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টার সংস্কার ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। 

অত্যন্ত দু:খের সাথে জানাচ্ছি, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমি সিলেট ছেড়ে পালিয়েছি এ ধরনের খবর রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ পদত্যাগ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধমে লেখালেখি করছেন। এ বিষয়টি আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, জীবনের অর্ধেক সময়ের বেশি শাবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি এবং দীর্ঘদিন থেকেই সিলেটে বাসা তৈরি করে পরিবারসহ বসবাস করছি। আমি বর্তমানে নিজ বাসায় অবস্থান করছি।


আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করবো বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ আমার সাথে যেকোনো স্থানে আলোচনা করতে চাইলে আমি তোমাদের স্বাগতম জানাই।


প্রো-ভিসি হিসেবে সুস্পষ্ট করে আমার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদেরকে বলতে চাই প্রায় ৩৪(চৌত্রিশ) বছর শিক্ষকতা করার পর যদি মনে করো আমার সেবা তোমাদের আর প্রয়োজন নাই তাহলে বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দিক নির্দেশনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট আমি পদত্যাগ করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / এন.এফ / ডি.আর/ নাজাত