ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও বিজয়োৎসবে মাতেন সিলেটবাসী। রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা হানা দেয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ভাঙচুর আর লুট করে মালপত্র। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয় সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। বিধ্বস্থ নগরী যখন অভিভাবকহীন, নিরাপত্তাহীন তখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় মাঠে নামেন সিলেট বিএনপি নেতারা।
সোমবার (৫ আগস্ট) রাত থেকে এখন পর্যন্ত তারা বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পার করেছেন ব্যস্ত সময়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালানোর পর সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় লুটপাট। নয়াসড়কে ফ্যাশন হাউস ‘মাহা’তে লুটপাট হয় সবচেয়ে বেশি। কয়েক কোটি টাকার কাপড় ও ফ্যাশন সামগ্রী লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। লুট হয় নগরীর বিভিন্ন স্থানের দোকানপাট। হামলা চালানো হয় নগরভবনে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলায় নগরভবনের অন্তত ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়, কোতোয়ালী থানা, দক্ষিণ সুরমা থানা, বন্দরবাজার ফাঁড়ি, সোবহানীঘাট ফাঁড়ি ও লামাবাজার ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কয়েকটি স্থাপনা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও বাদ যায়নি হামলা থেকে। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বাসা-বাড়িতে।
এই অবস্থায় আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে যায় পুলিশ স্টেশনগুলো। ভেঙে পড়ে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা। সহিংসতার পর আতঙ্কে সিলেট সিটি করপোরেশনের মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। ফলে সেবা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এই অবস্থায় নগরীতে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় মাঠে নামেন বিএনপি নেতারা।
সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামালসহ নেতারা পিকআপে চড়ে মাইকিং করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও মিফতাহ সিদ্দিকীসহ জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের সাহস যুগাচ্ছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে তাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
লুটপাটকারীরেদর প্রতিরোধ করতে জনগণের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামারও আহ্বান জানান তারা। এরপর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাতজেগে পাহারার উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাতে কেউ হামলা করতে না পারে এজন্য তারা সতর্ক থাকেন।
গত মঙ্গলবার জেলা ও মহানগর বিএনপির সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে, নগরীতে যেসব লুটপাট ও নাশকতা হয়েছে এর সাথে বিএনপি কিংবা দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। সুযোগসন্ধানীরা বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা ছাত্র-জনতার সাথে মিশে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতারা।
এদিকে, বুধবারও সিলেটে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি নেতারা দিনভর কাজ করেছেন। পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করে তাদেরকে দায়িত্বপালনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। দুপুরে আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সিসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও পর্যবেক্ষণ করে নগরভবনের সকল কর্মচারীকে কাজে অংশ নিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। তাদের নিরাপত্তায় সবধরণের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে, বুধবার নগরীর আম্বরখানায় ব্যবসায়ীদের সাথে সাক্ষাত করে তাদেরকে সাহস যুগিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের অপর উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করে তাদেরকে সবধরণের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে লুটপাট কিংবা কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিএনপির উপর দায় চাপাতে না পারে সে ব্যাপারেও তিনি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি আন্দোলনে আহত দলীয় নেতাকর্মীদেরও দেখতে হাসপাতালে ও তাদের বাসায় যান।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / শাদিআচৌ / ডি.আর