দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের উদ্যোগে উচ্চ পর্যায়ের এক জরুরী বৈঠক গত ১০ আগস্ট সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের কুদরত উল্লাহ মসজিদ মার্কেটস্থ ৩য় তলার অস্থায়ী কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হয়।
 

ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী নাসির উদ্দিন এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বৃহস্পতিবার রাতে মান্যবর ড. মোঃ ইউনুস এর নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করায় স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গণআন্দোলনটি ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।


আন্দোলনের নেতৃত্বদান ও অংশগ্রহণকারী জেনারেশনকে জেড বলে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্দোলনের উদ্ভাবনী কৌশল ও প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ বিপুল ভাবে সাড়া দেয়। এই আন্দোলনটি ছিল অরাজনৈতিক। ছিলনা রাজনৈতিক দলের মত গতানুগতিক। তাই জনগণের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। চুড়ান্ত দারিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে সিলেটের পূণ্যভূমি থেকে দেশের উচ্চ পর্যায়ে বড় বড় দুর্নীতি, ঋণখেলাপী ও অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের ব্যনারে এই গণআন্দোলনটি ২০২৪ সালে এসে সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বর্তমান দেশের জাতীয় বীরদের উদ্যোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রূপ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবাজদের পতন শুরু হয়েছে।
 

সভা বলা হয় দুর্যোগময় মুহূর্তে জাতির গৌরব বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বাংলার মানুষ আজীবন স্মরণ রাখবে এবং এই ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলেও আজ প্রশংসিত। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নভেল বিজয়ী ড. মোঃ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের মাধ্যমে ছাত্ররা তাঁর উপর যে আস্থা ও প্রত্যাশা রেখেছেন নিশ্চিই তিনি ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদ ১০০% বাস্তবায়ন করবে, ইনশাআল্লাহ। সভায় বক্তারা বলেন, সীমাহীন লুণ্ঠন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা গচ্ছা, পদলেহী আজ্ঞাবহন দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পদে অবস্থান দিয়ে দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়। রাষ্ট্র সংস্কারে সুপারিশ প্রাপ্তির জন্য জরুরী ভিত্তিতে ৫/ ৭/ ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের দাবী জানান।
 

সভায় গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রক্তাক্ত ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলা হয়, ছাত্র-জনতার লক্ষ্য পূরণকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য এই জঘন্য হামলা করা হয়েছে। দ্রুত এদেরকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানানো হয়।

সভায় ছাত্র জনতার আন্দোলনের নামে সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট, বাসবাড়ি, গণভবন, সরকারি স্থাপনা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোতে ন্যাক্কারজনক হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বক্তারা বলেন, এই হামলার সাথে জড়িতদের খোঁজে বের করে আইন আওতায় আনার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
 

স্বাধীন দুদক ও নির্বাচন কমিশন, সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপীদের ঋণ শিডিউল প্রক্রিয়া বাতিল, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিষয়-সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান বাধ্যতামূলক ও তাদের দুর্নীতিরোধে সংবিধানে থাকা ন্যায়পাল কার্যক্রম চালু সহ রাষ্ট্রের মেরামত, জঞ্জাল অপসারণ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সচল, স্বাধীন বিচার বিভাগ, বড় বড় দুর্নীতি, অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সহ নানা সংস্কার করতে যতদিন সময় লাগে তত দিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা সহ সকল উপদেষ্টা এবং প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদের বিষয়-সম্পদের হিসাব এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করে জবাবদিহিতার সূত্রপাত করার জোর দাবী জানান বক্তাগণ।
সভায় কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শহীদ আবু সাঈদ সহ সকল শহীদদের প্রতি বিনম্রগভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
 

দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জননেতা মকসুদ হোসেন এর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী, উপদেষ্টা নেছারুল হক চৌধুরী বুস্তান স্যার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ অরুণ কুমার দেব, কেন্দ্রীয় সিনিয়র সদস্য সরোজ ভট্টাচার্য্য, অরুণ দেবনাথ এডভোকেট, যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইকবাল মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ নুর আহমদ জুনেদ প্রমুখ।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-৬৪৭৯