আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের একজন ছাত্র এবং বর্তমানে কর্মরত একজন ফ্যাকাল্টি হিসাবে। বর্তমান বাংলাদেশ এর এই নতুন দিগন্তে বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশ কেন্দ্রিক আমার একান্ত নিজস্ব কিছু ভাবনা শেয়ার করছিঃ
 

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিকঃ


১। হলগুলোতে বিগত সেমিস্টার এর ফলাফল এবং প্রয়োজনীয়তার এর ভিত্তিতে (বিজ্ঞান, ফলিত, সামাজিক ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা ভাবে) ডিস্ট্রিবিউট করা। প্রথম বর্ষের জন্য ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল এর উপর ভিত্তি করে ডিস্ট্রিবিউট করা। 

২। বিগত প্রশাসনের সময় যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ (ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী) হয়েছে তাদের কাছ হতে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তদনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৩। ছাত্র-শিক্ষক এর মধ্যে পারস্পারিক সম্মানজনক ও সু-সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

৪। প্রতি সপ্তাহ / মাস এ সবার অংশগ্রহণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করা।

৫। বিভাগ ওয়ারী এ ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক দের মধ্যে প্রতি মাসে অন্তত একবার সরাসরি কনফারেন্সিং করা।

৬। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন এর ব্যাবস্থা করা।

৭। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান স্থাপনার কাজ এর সঠিক তদারকি করা এবং তদসঙ্গে উপুরি কামাই এর আশায় কোন কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। এই জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা।

৮। সকল ক্যান্টিন এর খাবারের মান ও দাম তদারকির জন্য ভিজিলেঞ্জ টিম গঠন করা।

৯। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ কর্তৃক সেন্ট্রাল ছাত্র ক্যান্টিন এবং হল সংসদ কর্তৃক হল ক্যান্টিন পরিচালনা। 

১০। সবার সাস্থ্য বিবেচনায় মেডিকেল সেন্টার এ পর্যাপ্ত ডাক্তার ও মেডিসিন নিশ্চিত করা। সেই সাথে মেয়ে ও ছেলেদের আলাদা কেবিন/ওয়ার্ড এর ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা।

১১। কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ এ প্রিলিমিনারী, লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা নেয়া।

১২। শিক্ষক নিয়োগ এ মৌখিক, ডেমো ক্লাস, ডিগ্রীর ফলাফল, রিসার্চ পাব্লিকেশন্স এর উপর আলাদা আলাদা মুল্যায়ন এর ভিত্তিতে নিয়োগ। উচ্চতর ডিগ্রী ও ভাল পাব্লিকেশন্স এর জন্য পূর্বতর ডিগ্রীর ফলাফল এর উপর ওয়েটেজ কম দেয়া। হাই ইম্পেক্ট পাব্লিকেশন ধারী শিক্ষকদের প্রমোশন তরান্বিত করা এবং ইনক্রিমেন্ট দেয়া। 

১৩। যেহেতু নামের সাথে বিশ্ব রয়েছে তাই শিক্ষক/ভিসি নিয়োগ এ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হলে ভাল হয়। 

১৪। অধ্যাপক গ্রেড ২ হতে গ্রেড ১ প্রমোশন দিতে পাবলিকেশন্স এর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া ( প্রচলিত নিয়মে পাবলিকেশন্স প্রয়োজন নেই)। 

১৫। ভিসি, প্র-ভিসি এবং ট্রেজারার দের অন্তত প্রতি তিন মাস এ একবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের (ছাত্র- ছাত্রী ও শিক্ষক) সাথে আলাদা ভাবে কনফারেন্সিং করতে হবে।

১৬। প্রতি সেমিস্টার শেষে ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা গোপনে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা। তদনুযায়ী তাদেরকে পুরস্কৃত করা।

১৭। গবেষণায় উৎসাহিত করার নিমিত্তে শিক্ষক ও ছাত্র উভয় কেই পুরস্কৃত করা।

১৮। প্রতি বিভাগে সেন্ট্রালি টিএ ও আর এ এর ব্যবস্থা করা যাতে ছাত্র ছাত্রীদের টিউশনি মুখী হতে না হয়।

১৯। আরো বেশি ছাত্র-ছাত্রী ও রিসার্চ বান্ধব করার জন্য অবশ্যই শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেল করা। 

২০। জাতীয় ক্রমে শিক্ষক দের সর্বোচ্চ অবস্থান সুসংহত করা।

২১। প্রতি সেমিস্টার এর ফলাফল এর উপর ভিত্তি করে ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা।


দেশ কেন্দ্রিকঃ

***বর্তমান এ চাপিয়ে দেয়া প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারি শিক্ষা কারিকুলাম দ্রুততার সাথে বাতিল করা এবং পূর্বের কারিকুলাম কে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ দ্বারা মডিফাই করে প্রতিস্থাপিত করা।

*** প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরে শিক্ষকদের জন্য মাসিক ভিত্তিতে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার ব্যাবস্থা করা। 


***বিভিন্ন মন্ত্রানালয়ের সর্বোচ্চ পদ সেই মন্ত্রানালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এক্সপার্ট দ্বারা পূরণ করা (যেমনঃ স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের জন্য ডাক্তার, শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের জন্য অধ্যাপক, কৃষি মন্ত্রানালয়ের জন্য কৃষিবিদ, ইত্যাদি)

***পিএসসি তে একজন অধ্যাপক কে চেয়ারম্যান করে মেম্বার হিসাবে বিভিন্ন বিষয়ের এক্সপার্ট দের নিয়োগ দেয়া (যেমনঃ অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব, পুলিশ ইত্যাদি) 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আপনাদের নতুন পরামর্শ উপরোক্ত পরামর্শগুলোকে আরো সমৃদ্ধ করবে।

 

লেখক: অধ্যাপক ড মো: নিজাম উদ্দিন, রসায়ন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট