খরচ কমাতে পারলে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর সরকারি উদ্যোগে ভালো সাড়া মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নতুন করে জাহাজ কিনে এনে জেদ্দায় হাজি পাঠানো বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যাত্রীবাহী জাহাজ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এ জন্য সরকারি অনুদান অথবা ঋণ সহায়তা চাইছেন।
সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর আগ্রহ নিয়ে ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্যের পর আবারও বিষয়টি আলোচনায় আসে। আশির দশকের মাঝামাঝিতেও এ দেশ থেকে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি হিজবুল বাহারে চড়ে হজে যেতেন অনেকে। তখন হজে যাতায়াতের সময় লাগত দেড় থেকে দুই মাস। কিন্তু আকাশপথে কম সময়ে যাওয়া-আসার সুবিধার কারণে জাহাজে করে হাজি পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় ১৯৮৪ সালে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হজযাত্রীদের খরচ কমাতে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশের তরফ থেকে জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর আগ্রহের কথা জানালে সৌদি পক্ষ থেকে সম্মতি জানানো হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, সৌদি সরকার জাহাজে হজযাত্রায় পাঠানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। এখন দেশে জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। তিনি জানান, সরকার চাইছে এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে হলেও জাহাজে অল্প সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানো হোক।
তবে হজে যেতে আগ্রহীরা বলছেন, আকাশপথের তুলনায় জাহাজ ভাড়া কম রাখতে হবে জনপ্রতি অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। নইলে মানুষ ১৫ থেকে ২০ দিন যাতায়াতের ধকল নিয়ে জাহাজে যেতে চাইবে না।
চট্টগ্রামের হাজেরা তজু কলেজের সাবেক এক অধ্যক্ষ জানান, ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় মানুষের পক্ষে হজে যাওয়া কঠিন। কিন্তু জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে খরচ যদি তিন লাখ টাকার মধ্যে হয় মানুষের আগ্রহ পাওয়া যাবে।
হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরাও বলছেন একই কথা। তাঁদের মতে, বিমানযাত্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টার দেরিতে হজযাত্রীরা যেভাবে অস্থির হয়ে ওঠেন সেখানে দুই থেকে আড়াই সপ্তাহের জন্য জাহাজে উঠতে চাইবেন কিনা সংশয় আছে।
বেসরকারি হজ এজেন্সি রাফি হজ কাফেলার চেয়ারম্যান মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, ‘মানুষ বিমান ছেড়ে জাহাজে চড়ে কেন সৌদি যাবেন? টাকা কম এবং ব্যবস্থাপনা ভাল না হলে মানুষ আগ্রহ দেখাবে না।’
এদিকে সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনার পর যাত্রীবাহী জাহাজ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা উন্নত মানের ক্রুজ জাহাজ কেনার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বিদেশে। তাঁরা বলছেন, ভাড়া কমাতে পারলে মানুষ সমুদ্রপথে হজে যেতে আগ্রহী হবে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ বলেছেন, ‘লন্ডনসহ কয়েকটি দেশে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, খরচ কমে আসবে।’
মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাতায়াতের মতো মানসম্মত কোনো যাত্রীবাহী জাহাজ এ দেশে নেই। এ কারণে হজযাত্রী পরিবহনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে নতুন করে ক্যারিবিয়ান ক্রুজের মানের প্রমোদতরী কিনতে হবে ব্যবসায়ীদের।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক