আবার ইতিহাস, মহানায়ক সেই ট্রাম্প। সব জরিপ মিথ্যা প্রমানিত করে হোয়াইট হাউজের চাবি উঠলো তাঁরই হাতে। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রাপ্য ২৭০টিরও অধিক ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে তিনিই হচ্ছেন আমেরিকার ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট।
 

২০১৬ সালে হিলারী ক্লিনটনের সাথে “লড়াই” করে জিতলেও ২০২৪ সালে এসে বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে “পাত্তাই” দিলেন না তিনি। শুধু তাই না, সিনেট আর কংগ্রেসও তাঁর দল যেনো আধিপত্য বিস্তার করেছে।


তবে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের পথ মসৃন ছিল না, সমস্ত ‘প্রতিকূলতা’ উপেক্ষা করে ‘অত্যাশ্চর্য’ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটালেন ট্রাম্প। বাইডেনের সাথে পরাজয়ের পর বিভিন্ন ধরনের পরিসিথিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। মামলা-মোকাদ্দমা, জেল জরিমানা কি ছিলো না সাথে? ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে সহিংস হামলা উসকে দেওয়ার অভিযোগের মামলা এখনো তাঁর বিরুদ্ধে চলছে। ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি হয়েও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে ইতিহাস গড়বেন তিনি।
 

এত এত “বদনাম” থাকার পরও রিপাবলিকানরা যে তাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনীত করেছিলো সেটাই ছিলো সাহসী সিদ্ধান্ত। বিপদের সময় দল ছিলো ট্রাম্পের পাশে।

রিয়েল এস্টেট টাইকুন থেকে হোয়াইট হাউসে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হিসাবে দৌড়ে শামিল হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিলিয়নিয়ার। নিউ ইয়র্কের এই রিয়েল এস্টেট টাইকুনের বর্ণাঢ্য জীবন কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন ট্যাবলয়েডের পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায় ফুটে উঠেছে। বিনোদন জগতেও তিনি একজন বহুল পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বিনোদন জগতে তার খ্যাতি তৈরি হয় প্রথমে মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থার মালিক হিসাবে এবং তারপর এনবিসি রিয়েলিটি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এর স্রষ্টা হিসাবে। ট্রাম্প বেশ কয়েকটা বই লিখেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র এবং প্রো-রেসলিং অনুষ্ঠানে পানীয় থেকে নেকটাইসহ অনেক কিছুই ‘বিক্রি’ করেছেন।
 

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট দলের মনোনয়ন জেতার দৌড়ের বিষয়ে তিনি মনোনিবেশ করেন ২০০০ সালে প্রথমে রিফর্ম পার্টির হয়ে। পরবর্তীতে ২০১২ সালে রিপাবলিকান হিসাবে।

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’-কে ২০১৬ সালে প্রচারাভিযানের স্লোগান বানিয়ে সহজেই রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য সদস্যদের (যারা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে ওই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন), পিছনে ফেলে দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের মুখোমুখি হন।

২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম ঘণ্টা থেকেই তার কার্যকালে বারেবারে নাটকীয়তা দেখা গিয়েছে। জলবায়ু ও বাণিজ্য চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন, সাতটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দেন, অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেন।তার কার্যকালে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
 

২০২০ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোট পেয়েও জো বাইডেনের কাছে ৭০ লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।যদিও তার প্রতিদ্বন্দ্বীর এই জয় তিনি মেনে নিতে পারেননি। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের দুর্বল প্রত্যাবর্তনে তাকে দায়ী করা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসাবে নিজের দলের মনোনয়ন চেয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামেন। ক্রমে অন্যান্য রিপাবলিকান সদস্যদের মনোনয়নের দৌড়ে পিছনে ফেলে দেন।

বাইডেনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নাটকীয় মোড় নেয়। তবে নির্বাচনের শুরুতে বিভিন্ন জরিপে কমালা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও সময়ের ব্যবধানে ট্রাম্প তা কমিয়ে আনেন এবং সুইং স্টেটগুলোতে তাঁর প্রচারণার কৌশল পরিবর্তন করেন। এরই ধারবাহিকতায় ২৯৪+ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
 

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে ট্রাম্প এবং তাঁর রানিং মেট জেডি ভ্যান্স কিভাবে তাদের পরিকল্পনা সাজান তাই এখন দেখার বিষয়। (ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঊষা চিলকুরি।  চিলুকুরি পরিবার আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোয় বড় হয়েছেন।)

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রীতি অনুযায়ী ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং জানুয়ারির ২০ তারিখে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

 

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক