শাহী ঈদগাহ সিলেট দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সিলেটের এক ঐতিয্য হলো ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ। জানা যায়, এটি নির্মিত হয়েছে ১৭০০ শতাব্দীর প্রথম দশকে। তৎকালীন সিলেটের ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, নিজ তদারকিতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রতি বছর বাংলাদেশে দুই ঈদের সময় দেশের যেসব বিখ্যাত ঈদগাহ এর নাম বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে, সেগুলোর মধ্যে 'শাহী ঈদগাহ সিলেট' অন্যতম। সিলেটের এই ঈদগাহে প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিশাল দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ মুসল্লী এক সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সিলেটের মানুষ ঈদের নামাজের জন্য এই স্থানটির প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ অনুভব করেন।

 


 

ঐতিহাসিক ঘটনা কেন্দ্রিক সিলেট শহরের এ স্থানটি নানা কারণে সারাদেশের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও স্মরণীয়। ইংরেজ বিরোধী ভারত - বাংলা জাতীয়তাবাদীর প্রথম আন্দোলন সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাদী কর্তৃক ১৭৭২ সালে এই ঈদগাহ মাঠেই শুরু হয়েছিলো। এখানেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মতো নেতারা এসেছিলেন এবং এখান থেকেই ব্রিটিশ শাসন বিরোধী গণ আন্দোলের আহবান জানিয়েছিলেন। এজন্যই সিলেট শহরের এ স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এখানেই ১৭৮২ খ্রিষ্টীয় সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মুহররমের হাঙ্গামা সংঘটিত হয়েছিলো। এটি ছিলো তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। এই শাহী ঈদগাহ সিলেট এর রয়েছে প্রায় তিনশতো বছরের শক্তপোক্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস।

 

 

শাহী ঈদগাহ সিলেট সৌন্দর্যে অনন্য। মূলত একটি উঁচু টিলার উপর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। মুল ভূ-খণ্ডে আছে কারুকার্য খচিত ২২টি বৃহৎ সিঁড়ি। ওইসব সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠলে ১৫টি গম্বুজে সজ্জিত ঈদগাহ দেখতে খুবই সুন্দর। শাহী ঈদগাহের সীমানা ঘেরা প্রাচীরের চারিদিকে রয়েছে ছোট বড়ো বেশ কয়েকটি গেইট। ঈদগাহের সামনে মুসল্লীদের অজুর সুবিধার জন্য রয়েছে একটি পুকুর। শাহী ঈদগাহ সিলেট এর উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে সবুজ বনে ঘেরা সুউচ্চ টিলার ওপর বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে আছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, এর পূর্ব দিকে রয়েছে হজরত শাহজালাল রঃ এর সফরসঙ্গী শাহ মিরারজীর মাজারের পাশের টিলার উপরে সিলেট আবহাওয়া অফিস। 'শাহী ঈদগাহ সিলেট' সিলেটের শহরের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে খুব পরিচিত জায়গা। সিলেট শহরের হজরত শাহজালাল রঃ আঃ এর দরগাহ গেইট থেকে কিংবা সুরমা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিলেটের ঐতিহাসিক আলী আমজদের ঘড়ির কাছে থেকে অথবা সিলেট এমসি কলেজ থেকে একেবারেই নিকটে, কম খরচে রিকশা অথবা যেকোনো সাধারণ যানবাহনে চড়ে মাত্র পনেরো থেকে বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছা যায়। 

 

 

সিলেট শহরের প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রতিদিন বিকালে শহরের ছোটো বড়ো সকল মানুষ বেড়াতে আসেন। ঈদগাহের মাঠে সবসময় ছায়া দেয় সবুজ পত্র পল্লবে ঠাসা বেশকিছু ছোটো বড়ো বৃক্ষ। সবুজের সমারোহে এখানে বজায় থাকে শীতলতা। যারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সিলেটের সৌন্দর্য দেখতে ও ইতিহাস জানতে সিলেট ভ্রমণে আসেন, তারা এই ঐতিহাসিক 'শাহী ঈদগাহ সিলেট' দেখে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।। 

 

 

 

লেখক : কলামিস্ট মোহাম্মদ আব্দুল হক

[email protected]