পঁচাশি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যা সিলেট জেলা হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও হাসপাতাল ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না গণপূর্ত বিভাগ। সমন্বয়হীনতার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ কেউই এর দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না! ফলে হাসপাতাল চালু নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এই চালু হলে পার্শ্ববর্তী এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা এখান থেকেও নিতে পারবেন উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা।



জেলা গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রায় সাত একর ভূমির ওপর হাসপাতাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।


এদিকে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শেষ হলে সিভিল সার্জন কার্যালয় নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা পরিচালনা করবে, সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। হাসপাতাল হস্তান্তরের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না পাওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।


সম্প্রতি হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনে আটতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ। রঙের কাজ, ইলেকট্রিক, টাইলস, গ্লাস, দরজা, জানালা লাগানোও সম্পন্ন। মাসখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে লিফটেরও কাজ। হাসপাতাল ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে কারপার্কিং; প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম; দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার; তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক; চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ; পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।


তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের দাবি শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গণপূর্ত তা আমলে নেয় নি। ফলে শুরু থেকেই সমস্যা ছিলো। এখন দায়িত্ব নিলেও পর্যাপ্ত লোকবল নেই বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান।


তিনি সিলেটভিউকে জানান, একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকির কথা ছিল। আমরা মন্ত্রণালয়কে সেভাবেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব যখন মন্ত্রণালয়ে যায়, তখন গণপূর্ত বিভাগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। এখন তারা আমাদের গছাতে চাচ্ছে। আমার কাছে এতো লোকবলও নাই যে আমি এটা চালাতে পারবো। তাই এ অবস্থায় আমরা হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে পারি না।


তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জেলা গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর। তিনি সিলেটভিউকে জানান, আমাদের কাজ শেষ। এখন আর আমাদের দায়িত্ব নেই। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুতই হস্থান্তর করবো। গণপূর্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ নেয়নি বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন প্রকৌশলী আবু জাফর।


হাসপাতালের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা কোন কিছুতেই সমন্বয় করা হয়নি সিভিল সার্জন অফিসকে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিবে সেটি আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেটভিউকে বলেন, হাসপাতালের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদির কাগজপত্র আমাদের কাছে দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় সেই আলোকে হয়তো সিদ্ধান্ত নিবে।


এদিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ঠেলাঠেলি বন্ধ কেরে দ্রুত সময়ের মধ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ হাসপাতাল চালু করা উচিত। নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার অতি দ্রুততার সাথে এই হাসপাতাল পুরোদমে চালুর উদ্যোগ নিবে বলে প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি