অ্যারন জোন্স ও জর্জ মানজির ব্যাটিং দেখে ধন্দে পড়ে যেতে পারতেন যে কেউই। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, দুইশর বেশি রান তাড়ার চ্যালেঞ্জ, এসব যেন বেমালুম ভুলে গেলেন দুজন। দ্রুত রান তোলার তাড়া নেই, বড় শটের তাড়না নেই, জেতার যেন ইচ্ছেই নেই দুজনের! পাঁচ ওভারের একটি বিস্ময়কর ধাপে স্রেফ একটি বাউন্ডারি মারলেন তারা। এমনিতেই কঠিন লক্ষ্য তাতে দূরে সরে গেল আরও। পরে আর জ্বলে উঠেও লাভ হলো না কিছুই।
পরাজয় দিয়ে সিলেট পর্ব শেষ করল সিলেট স্ট্রাইকার্স। স্থানীয় দলকে ৩০ রানে হারিয়ে চট্টগাম পর্বের জন্য আত্মবিশ্বাসের রসদ আরও বাড়িয়ে নিল চিটাগং কিংস।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার চিটাগং ২০ ওভারে তোলে ২০৩ রান। ফর্মে থাকা উসমান খান ও গ্রাহাম ক্লার্কের ব্যাট থেকে আসে ফিফটি। শেষ দিকে ঝড়ো ইনিংস খেলেন হায়দার আলি।
সিলেট আটকে যায় ১৭৩ রানে। সপ্তম থেকে একাদশ, এই পাঁচ ওভারে অতি মন্থর ব্যাটিংয়ের পর লক্ষ্য এত কঠিন হয়ে ওঠে যে, জাকের আলির দারুণ ইনিংসের পরও বড় ব্যবধানেই হারতে হয় দলকে। সিলেটে পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই হারল সিলেট। সব মিলিয়ে ছয় ম্যাচে তাদের জয় স্রেফ দুটি। চার ম্যাচে চিটাগংয়ের জয় তিনটি।
জাকির-ঝলক আর অন্যদের আঁধার
রান তাড়ার শুরুতেই হোঁচট খায় সিলেট। রাকিম কর্নওয়ালের কুঁচকির চোটের কারণে সুযোগ পাওয়া পল স্টার্লিং আউট হয়ে যান ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। এবারের আসরে প্রথম খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদ।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জাকির হাসান নেমেই শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। নাবিলের ওই ওভারেই বাউন্ডারিতে বল পাঠান তিনি তিনবার। পরে ছক্কা মারেন আলিস আল ইসলামকে। তবে সিলেটের আগের দুই ম্যাচের নায়ক এবার আর বড় করতে পারেননি ইনিংস। আলিসের শিকারে পরিণত হন তিনি ১৯ বলে ২৫ রান করে।
দুই রানে আলিসের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া রনি তালুকদার থেমে যান সাত রান করে। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৪৬ রান তোলে সিলেট।
রহস্যময় পাঁচ ওভার
পাওয়ার প্লে শেষে অ্যারন জোন্স ও জর্জ মানজির ‘পাওয়ার’ যেন নিভে যায় একদমই। চার-ছক্কা বহুদূর, সিঙ্গল-ডাবলস নিতেও খুব একটা চেষ্টা দেখা যায়নি তাদের। প্রয়োজনীয় রান রেট বাড়ছিল তরতর করে। কিন্তু তারা ছিলেন ঝিমিয়ে। অথচ তারা দুজনই সহজাত আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। ওই পাঁচ ওভারে মাত্র একটি বাউন্ডারিতে রান আসে ২০।
১১ ওভারে সিলেটে রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৬। ১৮ বলে ১৫ রান করে আউট হন জোন্স। মানজির সঙ্গে তার জুটির ২২ রান আসে ৩১ বলে।
সব হারিয়ে বৃথা চেষ্টা
শেষ ৯ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন পড়ে ১৩৮ রান। জাকের আলি ক্রিজে গিয়ে টানা দুটি বাউন্ডারি মারার পর ঘুম ভাঙে মানজির। হঠাৎ বুঝি নিজের পেশির জোর ফিরে পান তিনি। শরিফুল ইসলামের ওভারে চার ও ছক্কার পর পুনরাবৃত্তি করেন তিনি আলিস আল ইসলামের ওভারে। সৈয়দ খালেদ আহমেদের টানা দুই বলে বিশাল ছক্কার পর আরেকটি চার মেরে পৌঁছে যান তিনি ফিফটিতে।
এক পর্যায়ে তার রান ছিল ২২ বলে ১৩। পরের ১৪ বলে করেন ৩৯ রান! শেষ পর্যন্ত খালেদের ওই ওভারেই আউট হয়ে যান স্কটিশ এই ব্যাটসম্যান (৩৭বলে ৫২)।
এরপর অধিনায়ক আরিফুল হক গিয়ে দুটি ছক্কা মেরে আউট হয়ে যান। জাকের আলি দারুণ কয়েকটি শট খেলেন পরে। চার ছক্কায়২৩ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার স্বরূপে ফেরাই আপাতত সিলেটের প্রাপ্তি। রান তাড়ায় তারা পারেনি কাছাকাছি যেতেও।
বিবর্ণ পারভেজ
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে চিটাগং। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দলে সুযোগ পেয়ে আলোচনায় থাকা পারভেজ হোসেন ইমন বিপিএলে ব্যর্থ হন আরও একটি ম্যাচে। নাহিদুল ইসলামের স্পিনে একটি ছক্কা মারতে পারলেও শেষ পর্যন্ত আউট হন ১০ বলে ৭ রান করে। আগের তিন ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ছিল ৩০।
উজ্জ্বল উসমান ও ক্লার্কের আলো
আগের দুই ম্যাচে ১২৩ ও ৫৫ রানের ইনিংস খেলা উসমান খানের ব্যাট থেকে এবার আসে ৩৫ বলে ৫৫ রান। পাওয়ার প্লেতে বলতে গেলে তিনিই এগিয়ে নেন চিটাগংকে। পরে তার সঙ্গী হন তিনে নামা গ্রাহাম ক্লার্ক। ছয় ওভারে চিটাগংয়ের রান ছিল ৪৬। পরের চার ওভারে উসমান ও ক্লার্কের দাপটে রান আসে ৫৩!
অধিনায়ক আরিফুল হক বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই ফেরান উসমানকে। জুটি ভাঙে ৩৯ বলে ৬৮ রানে। ক্লার্ক এগিয়ে যান আরেকটু দূর। আগের দুই ম্যাচে ৩৯ ও ৪০ রানে আউট হয়েছিলেন ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে এবার বিপিএলে প্রথম ফিফটি করে ফেলেন তিনি ২৮ বলে।
আরিফুলের বলে চার মেরে ফিফটিতে পৌঁছানোর পর ওই ওভারেই ছক্কা মারেন ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে আরিফুলের হাতেই ধরা পড়েন তিনি নাহিদুলের বলে। পাঁচ ছক্কায় তিনি করেন ৩৩ বলে ৬০।
মিঠুনের ছোঁয়া
চিটাগং কিংসের বাড়তে থাকা রানের স্রোতে নতুন দোলা দেন মোহাম্মদ মিঠুন। দুই ছক্কায় ১৯ বলে ২৮ রান কনে চিটাগং অধিনায়ক। ক্লার্কের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ৩০ বলে ৪৮ রান।
হায়দারে হয়রান সিলেট
১৬তম ওভার শেষে চিটাগংয়ের রান ছিল ১৫২। দুইশ তখনও বেশ কিছুটা দূরের পথ। হায়দার আলির ব্যাটের ভেলায় সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় তারা। তানজিম হাসানের ওভারে দুটি চারের পর অষ্টাদশ ওভারে রুয়েল মিয়াকে বিধবস্ত করেন তিনি দুটি চার একটি ছক্কায়। ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। শেষ ওভারে রুয়েলকেই টানা দুটি ছক্কায় দলকে দুইশ পার করান হায়দার। নিজের ফিফটির জন্য শেষ বলে বাউন্ডারি প্রয়োজন ছিল হায়দারের। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান নিতে পারেন দুই রান। সেই রান তাড়ায় সিলেট হয়তো ম্যাচ জমিয়ে তুলতে পারত, যদি জোন্স ও মানজির জয়ের তাড়না আরেকটু বেশি থাকত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ২০৩/৬ (উসমান ৫৩, পারভেজ ৭, ক্লার্ক ৬০, মিঠুন ২৮, হায়দার ৪২, শামীম ১, ওয়াসিম ৩, শরিফুল ১*, নাহিদুল ৪-০-৩০-১, তানজিম ৪-০-৩৮-২, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৩৯-০, রুয়েল ৪-০-৪৮-১, জোন্স ১-০-১৬-০, আরিফুল ৩-০-৩০-১)।
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৭৩/৮ (রনি ৭, স্টার্লিং ০, জাকির ২৫, মানজি ৫২, জোন্স ১৫, জাকের ৪৭*, আরিফুল ১২, তানজিম ০, নাহিদুল ৩, নিহাদউজ্জামান ১*; নাবিল ২-০-২৫-১, শরিফুল ৪-০-৩৪-১, আলিস ৪-০-৩৬-২, খালেদ ৪-০-৩০-১, ওয়াসিম ৪-০-২৫-৩, শামীম ২-০-১৮-০)।
ফল: চিটাগং কিংস ৩০ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্রাহাম ক্লার্ক।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি