‘টিপু সুলতান, খান বাহাদুর, সোনার মডেল, লিভারপুল, জগৎ বাদশা, বাংলার ধন, প্রীতিরাজ, হিরো আলম, বনরাজ, সালমান শাহ, সোনা মানিক, লাল গোলাপ, এমরান বাদশা, শাপলা, দুই বোনের মায়া’সহ বাহারী নামের ১২৬টি ঘোড়ার অংশগ্রহনে সিলেটের বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে প্রায় দেড় যুগ চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী (১৪-১৬ জানুয়ারি) আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে সম্পন্ন হয়েছে। ওই দিন অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত লড়াইয়ে বিজয়ী শখের ঘোড়ার মালিকরা পুরস্কার হিসেবে ‘ভেড়া, টিভি, ইস্ত্রি, কলস, ছাতাসহ বিভিন্ন রকমের পুরস্কার জিতে নেন।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা দেখতে চাউলধনী হাওরে হাজার হাজার দর্শকের সমাঘন ঘটে। আর প্রায় দেড় যুগ পর বিশ্বনাথের ঐতিহ্যের স্মারক চাউলধনী হাওরে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগীতা দীর্ঘদিন ধরে নানান সমস্যায় জর্জরিত থাকা হাওর পাড়ের মানুষদেরকে আনন্দের ধারক-বাহক হয়ে এক নতুন মাত্রা যুগ করে।
৩ দিনব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা আসা ওই ১২৬টি ঘোড়া কয়েকটি ধাপ ফেরিয়ে চূড়ান্ত পর্যায় শেষে বিজয়ী হয়ে পরিস্কার লাভ করে। গ্রামীন জনপদের ঐতিহ্যবাহী ওই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় নিজের শখের ঘোড়া নিয়ে অংশগ্রহন করতে অনেক প্রবাসীও দেশে এসেছেন। অনেকেই আবার এসেছেন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা দেখে আনন্দ করার পাশাপাশি আতœীয়-স্বজনের সাথেও দেখা-সাক্ষাৎ করতে।
‘এমরান বাদশা’ নামের শখের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগীতা অংশগ্রহনকারী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সত্তরোর্ধ আরজুম আলী বলেন, শুধুমাত্র শখের বসে ছোট বেলা থেকেই ঘোড়া লালন-পালন করে আসছি। আর সিলেট বিভাগ’সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেই শখের ঘোড়া দিয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতাও অংশগ্রহন করে।
৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ‘সোনার মডেল’ নামের ঘোড়ার মালিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের ছালিয়া (দশঘর) গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, নিজের শখের ঘোড়া নিয়ে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতাগুলোতে অংশগ্রহন করতে কিছু দিন পূর্বে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছি। আর এসেই আমার ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ‘সোনার মডেল’ নামের ঘোড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতায়ও অংশগ্রহন করেছি।
প্রায় দেড় যুগ পর সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিযোগীতার আয়োজক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) থেকে শুরু হয়ে আজ (বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী) ৩ দিনব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা সম্পন্ন হয়েছে।
হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে দৌলতপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ওই প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়ে ছিল। আর চূড়ান্ত প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ী ঘোড়ার শৌখিন মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রনঞ্জয়/এসডি-২২