ইয়াবা কারবারে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত রুটে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠছে মাদক কারবারি চক্র। মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে মাদক কারবারিরা জকিগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। দীর্ঘদিন এই রুটে ইয়াবা পাচার প্রায় বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি র্যাব-পুলিশের হাতে কয়েকটি চালান ধরা পড়া পর পুণরায় আলোচনায় এসেছে জকিগঞ্জ সীমান্ত।
ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত ও সিলেট শহরের সাথে একাধিক সড়ক যোগাযোগ থাকায় মাদক কারবারিরা জকিগঞ্জকে তাদের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয়। সিলেট শহরে আসার পর ইয়াবার চালান হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সূত্র জানায়, একসময় টেকনাফ ছিল ইয়াবা পাচারের সবচেয়ে বড় রুট। ওই রুট দিয়েই মায়ানমার থেকে অবাধে আসতো ইয়াবার চালান। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পর আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি চক্রের সদস্যরা পাচারের নতুন নতুন রুট তৈরি করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জ।
একসময় মায়ানমারের মান্দালে-সাগাইং-মনেয়া ও কালে অঞ্চল হয়ে ইয়াবার চালান ঢুকে ভারতে। এরপর ভারতের মণিপুরের মোরে-মিজোরামের আইজল-ত্রিপুরার পানিসাগর-মেঘালয়ের শিলং ও আসামের করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার বৃহৎ চালান প্রবেশ করতো বাংলাদেশে।
এই রুট ব্যবহার করে বেশ কয়েক বছর ধরে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান ঢুকছিল। সীমান্ত নদী কুশিয়ারা পার করে কারবারিরা সহজেই ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন জকিগঞ্জে। এরপর নানা কৌশলে ইয়াবা চলে আসে সিলেট শহরে। কয়েক বছর আগেও এই রুট দিয়ে আসা ইয়াবার চালান প্রায়ই ধরা পড়তো র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে। মাদক কারবারিরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ায় দিন দিন জড়িতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। নিষিদ্ধ কারবারে জড়িয়ে পড়েন অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও সাঁড়াশি অভিযানের ফলে গত প্রায় দুইবছর ধরে এই রুট দিয়ে ইয়াবা পাচার কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি র্যাব ও পুলিশের হাতে কয়েকটি চালান ধরা পড়ার পর ফের আলোচনায় আসে জকিগঞ্জ রুট।
সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি জকিগঞ্জের লোহারমহল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ একই উপজেলার কাপ্তানপুর গ্রামের মৃত ফয়জুল হকের ছেলে সোলেমান আহমদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগের গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জ বাজার থেকে ২১৮৫ পিস ইয়াবাসহ র্যাব আটক করে জকিগঞ্জ উপজেলার মৃত মেকাই মিয়ার ছেলে আবদুল মুতলিবকে।
১৮ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে ৯৪৭৫ পিস ইয়াবাসহ সিলেটের এক দম্পতিকে আটক করে র্যাব। আটককৃতরা হলো- জৈন্তাপুর উপজেলার মোহাম্মদপুর চৈলাখেল ৩য় খন্ড গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবরিনা কায়সার লস্কর পাপিয়া। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ইয়াবার চালানটি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সিলেট এসেছিল। পরে সিলেট থেকে ওই দম্পতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যান বলে সূত্র জানিয়েছে।
৪ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ নোয়াগ্রামে অভিযান চালিয়ে ১২০০ পিস ইয়াবাসহ নিজ বসতঘর থেকে তারেক আহমদ নামের এক মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার মো. সম্রাট তালুকদার জানান, জকিগঞ্জ সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে সম্প্রতি কয়েকটি চালানও ধরা পড়েছে। মাদক পাচাররোধসহ সবধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধে থানাগুলোর সক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ