জুয়ার আসর বসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে। জুয়ার নাম ‘শিলং তীর’। জুয়ার সেই তীরে বিদ্ধ হয়ে সর্বনাশ ঘটছে সিলেটের নানা পেশা ও বয়সী মানুষের। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সিলেটে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে এই জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা। ভারতের জুয়াড়িরা সিলেটে এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে টিকেট। আর এজেন্টদের কাছ থেকে টিকেট (নম্বর) কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। জুয়ার টিকেট কিনে সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা তুলে দিচ্ছেন দালালদের হাতে।
গত ১০ দিনে সিলেট নগরীতে অভিযান চালিয়ে ‘শিলং তীর’ জুয়া সিন্ডিকেটের ১১ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তবে প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে ‘শিলং তীর’ নামক জুয়া সেখানকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মূলত শিলং তীর নামক জুয়ার আয়োজকরা গ্রাহকদের কাছে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নাম্বার বিক্রি করেন। এর মধ্য থেকে একটি নাম্বার বিজয়ী হয়। বিজয়ী নাম্বার এজেন্টরা জানিয়ে দেন টিকেট (নাম্বার) সংগ্রহাকারীদের। যিনি বিজয়ী হন তিনি যত টাকা দিয়ে টিকেট কিনেন তার ৭০ গুণ বেশি টাকা পেয়ে থাকেন। গত প্রায় একদশক আগে এজেন্টের মাধ্যমে এই জুয়া খেলা চালু হয় সিলেটে।
‘একে-সত্তর’ এই লোভে পড়ে সিলেটের নানা পেশা ও বয়সী মানুষ এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। শুরুতে এই খেলা সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও একপর্যায়ে গোটা সিলেটে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে আসক্তি বাড়ে এই জুয়ায়। অনেকে সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা দিনশেষে তুলে দেন তীর জুয়ার এজেন্টদের হাতে।
মাঝে মধ্যে কেউ বিজয়ী হলেও বেশিরভাগই জুয়ায় আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হন। যুব সমাজেরও একটি অংশ আসক্ত হয়ে পড়ে এই জুয়ায়। ফলে বাড়তে থাকে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড। ‘শিলং তীর’ নামক এই জুয়া একসময় রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে কয়েক বছর আগে ওই জুয়ার কয়েকজন এজেন্ট গ্রেফতারও হন।
এদিকে, শিলং তীর নামক জুয়া সিলেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সচেতন সমাজ থেকে দাবি ওঠে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও শিলং তীরের জুয়াড়ি ও এজেন্টের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করায় গত কয়েক বছর ধরে এটি ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে। সম্প্রতি এই জুয়া ফের প্রকাশ্যে আসায় পুলিশ আবারও অ্যাকশনে নেমেছে।
সিলেট নগরীতে গত ১০ দিনে চারটি অভিযান চালিয়ে ‘শিলং তীর’ জুয়ার ১৩ জন এজেন্টকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জুয়ার টিকেট নাম্বার ও হিসেব রাখার সরঞ্জামাদি এবং নগদ টাকা। গত বুধবার কালিঘাট থেকে ২ জনকে ও সোমবার রাত পৌণে ১২টার দিকে কালিঘাট থেকে আরও ৬ জনকে আটক করা হয়। এর আগে ২৫ জানুয়ারি বিকেল সোয়া ৪টায় নগরীর পশ্চিম কাজলশাহ এলাকা থেকে ৩ জন এবং ২১ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় দক্ষিণ সুরমার মারকাজ পয়েন্টের কাছ থেকে দুইজনকে আটক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে একসময় ‘শিলং তীর’ নামক জুয়ার এজেন্ট ও জুয়াড়িদের তৎপরতা কমেছিল। এখন আবার তারা প্রকাশ্যে আসছে। ফলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের ধরছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই জুয়া মোবাইলে খেলা হয়, তাই হাতেনাতে ধরতে হয়। এজন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়। জুয়ার এজেন্টদের আস্তানায় অভিযান করতে পারলে কিছু প্রমাণপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় এরা সহজে পার পেয়ে যায়।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ-০১