এ.জে লাভলু, বড়লেখা:: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতিকর্মী জুনেদ রায়হান রিপন রচিত ‘আইডিয়া মেইকস মানি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বড়লেখা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বড়লেখা নজরুল একাডেমির আয়োজনে এই গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আকমল হোসেন নিপু। সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন। 


সহকারী শিক্ষক বদরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কবি-প্রকাশক মুজাহিদ আহমদ, সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা, বড়লেখা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী প্রধান শিক্ষক ময়নুল ইসলাম, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রশিদ আহমদ খান, সাবেক শিক্ষক সঞ্চিতা শর্মা, কবি ও লেখক জিতেন্দ্র দাস, সাংবাদিক সুলতান আহমদ খলিল, মস্তুফা উদ্দিন ও মাইকেল নংরুম, ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষ, সংস্কৃতিকর্মী সুপ্রিয় দাস, ব্যাংক কর্মকর্তা চিন্ময় দত্ত প্রমুখ। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু বলেন, বইপড়া থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। কথাটা সব জায়গায় আলোচিত হচ্ছে। সারা দুনিয়ায় আলোচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, বইয়ের সাথে আমরা শৈশব থেকেই যোগাযোগ। পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্প-উপন্যাস বা কবিতার বই পড়তাম। বই আজকে যত সহজে পাওয়া যায়, আগে ওতো সহজে বই পেতাম না। সারা দুনিয়ার বইগুলো খুঁজার চেষ্টা করতাম। ইংরেজি বইগুলো ভালো অনুবাদ খুঁজে পড়েছি। এখন সময় কিন্তু এভাবে হয় না। কিন্তু বই পড়ার যে আনন্দ, ওইটা আর কোথাও নেই। এতে মন এত ভালো থাকে। পৃথিবীটা এত স্বচ্ছ থাকে। আমার তো মনে হয়, মানুষকে বোঝা, পৃথিবীকে বোঝা, জীবনকে বোঝা, বই ছাড়া তা ভালো করে বোঝার সুযোগ নেই। তাই পড়তে হবে; জানতে হবে।  

গ্রন্থের লেখক জুনায়েদ রায়হান রিপনের সঙ্গে বইয়ের সূত্র ধরে পরিচয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুনেদ রায়হান রিপনকে আমি প্রথমে একজন সংগঠক হিসাবেই প্রথমে দেখেছি। এখানে বই মেলা হয়েছে। নজরুল একাডেমির বিভিন্ন তৎপরতার সাথে তাঁকে যুক্ত দেখেছি। কিন্তু দিন যত গেছে, আমার মনে হয়েছে, এই মানুষটার ভেতরে একটা কাঙাল মানুষ আছে, তিনি আরও মানুষের জন্য কিছু করতে চান। তিনি মানুষের জন্য ভাবেন। শুধু নিজের পেশা, নিজের জীবনযাত্রা তাঁর মধ্যে তিনি আটকে নেই। তিনি অনেক কিছু নিয়ে ভাবেন এবং বড়লেখার একটা আলাদা পরিচিতি তৈরি হোক তিনি চান। আমার মনে হয়েছে তাঁর সমস্ত ভাবনার জায়গাগুলো মানুষকে নিয়ে, প্রকৃতি নিয়ে, নিসর্গ নিয়ে। 

আইডিয়া মেইকস মানি বই সম্পর্কে আকমল হোসেন নিপু বলেন, পাণ্ডুলিপি যখন আমি পড়তে শুরু করলাম, তখন আমার মনে হয়েছে গ্রন্থের লেখক জুনায়েদ রায়হান রিপন অনেক গোছানো একজন ভাবুক। বহু দূর দূর থেকে এতসব বিষয় তিনি সমর্পিত করেছেন। আপনি যদি ওই জায়গাগুলোকে জানতে চান, তাহলে আপনাকে অনেকগুলো বই পড়তে হবে। আমার তো ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমার তো মনে হয়েছে আমি তো আগে এভাবে ভাবিনি। কিন্তু এই যে বিষয়গুলো এক জায়গায় করে একজনের হাতে তুলে দেওয়া, এটা বিশাল কাজ। অনেক পরিশ্রমের কাজ। এরকম কয়েকটি বই আমি পড়েছি। কিন্তু আমার ধারণা, বইটি এত ঝরঝরে ভাষায়, এত সাবলিল করে লেখা।েএরকম বই খুব কম আছে। যারা নতুন কিছু ভাবেন, উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য বইটা খুব দরকারি। বইটি তাদের প্রেরণা যোগাবে। 

আইডিয়া মেইকস মানি বইয়ের প্রকাশক ও কবি মুজাহিদ আহমদ বলেন, এখন বই আর কেউ পছন্দ করে না। বাবা-মারাও বই পড়েন না। এজন্য সন্তানরাও বই থেকে দূরে সরে গেছে। তিনি বলেন, যেকোনো বই হোক, তা পড়বে। কারণ আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্মেও বলা আছে, বই পড়ো। গুণীজনদেরও কথা হচ্ছে পড়ো। সবাই পড়বেন। বইয়ের সাথে থাকবেন। গ্রন্থটি প্রকাশের স্বার্থে চার-পাঁচবার পড়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বইটা কেন পড়বে? কারণ আমরা একাডেমিক যত লেখাপড়া করি, যত জ্ঞানঅর্জন করি। কিন্তু এইধরনের বই যদি মাথায় থাকে, তাহলে আমাদের লক্ষ্য তৈরিতে সহায়ক হবে। এই বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় শেখার মতো বিষয় আছে। বইয়ের লেখক ভিন ভাষার বই থেকে যেগুলো আহরণ করেছেন, নিজের দেখা থেকে, নিজের দেশ থেকে যে তথ্য-উপাত্তগুলো এই বইয়ে সন্নিবেশিত করেছেন। বিশেষ করে যারা উদ্যোক্তা আছে, যারা ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে, স্বপ্ন দেখে। আমরা আশা করি, বইটি শুধু বড়লেখায় নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে যাক।  

সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা বলেন, এখনও অনেক মানুষ আছেন, যারা বই নিয়ে, লেখালেখি নিয়ে চিন্তা করেন। এই যে বইয়ে তিনি আইডিয়াগুলো লেখেছেন, তা অনেক বড় বিষয়। এই বইটা যারা নতুন কিছু ভাবছেন, বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের পথ দেখাতে সাহায্য করবে। তিনি বইয়ের লেখক জুনেদ রায়হান রিপনকে ধন্যবাদ জানান। 

বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব বলেন, বই মানুষকে আলোকিত করে। জুনেদ রায়হান রিপন রচিত ‘আইডিয়া মেইকস মান’ গ্রন্থটি ব্যতিক্রম। তরুণদের উদ্বুদ্ধ করবে। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের উপকার হবে। বইটি এখনও পুরোটা পড়া হয়নি। নিপু ভাই যে ভূমিকা লেখেছেন তা পড়ে আমার মনে হয়েছে, বইয়ের লেখক রিপন ভাই ইকোনমিকের ছাত্র। অর্থনীতিতে তাঁর ভালো ধারণা রয়েছে। বাস্তবতাকে তিনি বইয়ের মধ্যে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে যেসব তরুণরা ব্যবসায় আসতে চান, বইটি তাদের পথ দেখাবে। 

মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রশিদ আহমদ খান বলেন, সভ্যতা যখন বিকশিত হয়, তখন দুটি জিনিস বিকশিত হয়। একটা হচ্ছে বিত্ত। অপরটি চিত্ত। বিত্তের জায়গা আমরা এগিয়েছি। কিন্তু চিত্তের জায়গায় আমরা এখনও পিছিয়ে। জুনেদ রায়হান রিপন আমাদের চিত্তের আনন্দের জন্য, বিকাশের জন্য, সভ্যতার বিকাশের জন্য বইটি লিখেছেন। আমরা প্রেমের কথা লিখি, ব্যর্থতার কথা লিখি, স্বপ্নের কথা লিখি। কিন্তু বড়লেখায় অনেক লেখক রয়েছেন, তারা অর্থনীতি নিয়ে লেখেননি। যেটা জুনায়েদ রায়হান রিপন লিখেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। 

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বলেন, আইডিয়া মেইকস মানি বইয়ের আদ্যোপান্ত আমি শুরু থেকেই পড়েছি। আইডিয়া শব্দটি খুবই মূল্যবান একটা শব্দ। পৃথিবীতে তিনটা শব্দ খুবই মূল্যবান। যার একটি আইডিয়া বা ধারণা। আইডিয়ার কোনো লিমিটেশন নেই। আইডিয়া যে ব্যক্তি বা জাতির বেশি তারা তত জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে এগিয়েছে। তিনি বলেন, নানান বইয়ের নির্যাসটুকু আইডিয়া মেইকস মানি বইয়ে চলে আসছে। এজন্য অসংখ্য বই না পড়েও একটি ভালো বই পড়লেও হবে।  

আলোচনা সভা শেষে নজরুল একাডেমির শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এজেএল