সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সড়কের অপ্রশস্থতাযর কারণে যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। কিন্তু এই মহাসড়কের চারলেন প্রকল্প এক বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে আটকা রয়েছে।

 


সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগ বলছে- এ মহাসড়কের দুটি স্থান মিলে পাঁচ দশমিক আট কিলোমিটার সড়ক চারলেন করার দরপত্র ২০২৪ সালের জুলাই মাসে হলেও দরপত্র প্রক্রিয়া সিলেট তত্ত্বাবধায়ক অফিস থেকে হয়েছিল। কিন্তু দরপত্র গ্রহণ শেষে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাবার কথা। কিন্তু এখনো সরকারি ক্রয় কমিটিতে যায়নি এই প্রকল্প।

 

জানা গেছে, ২৫ লাখ মানুষের জেলা সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রো, কার ও ট্রাক মিলিয়ে প্রায় ১২শ গাড়ি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি সিএনজি চালিত তিন চাকার যানসহ অসংখ্য ছোট ছোট গাড়ি চলছে এই সড়কে। অথচ সড়কটি কেবল জেলা শহরের তিন দশমিক আট কিলোমিটার ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটার চারলেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গেল বছরের জুলাইয়ে। এরপর এই বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ার থেকে ওয়েজখালী পাড় হয়ে পৌর কলেজ পর্যন্ত এবং উজানীগাঁও থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর পাড় হয়ে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট পর্যন্ত চারলেন সড়ক করার উদ্যোগ নিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা।

 

ওই প্রকৌশলী জানান, এই দুইটি স্থানের চারলেনের দরপত্র আহ্বান করার পর, দরপত্র গ্রহণও করা হয়েছে। পরে এগুলো অনুমোদনের জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওখান থেকে সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাবার কথা। কিন্তু সেটি এখনো হয় নি। সরকারি ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় এরপর শুরু হয় কাজ। সেই প্রক্রিয়া থেমে আছে।

 

পরিবহন মালিক শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য মতে, সুনামগঞ্জের পাঁচটি পরিবহন মালিক সমিতির প্রায় পাঁচশ’ গাড়ি প্রতিদিন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচল করছে। এছাড়া আন্ত:জেলা বাস সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করছে ৮০ টি। এসব বাস ছাতক ও দিরাই থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পথ দিয়েই যাওয়া আসা করে। সব মিলিয়ে আন্তজেলা বাসের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া সারা জেলায় কার, মাইক্রো, হাইয়েচ আছে প্রায় পাঁচশ’। ট্রাক আছে একশ’ এর মতো। যেগুলোর যাতায়াত এই পথ হয়েই। ছোট ছোট যানবাহনও বেড়েছে। জেলায় বৈধ সিএনজি আছে পাঁচ হাজার তিনশ’ এর মতো। অবৈধ মিলিয়ে সিএনজির সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে যাবে। যার বেশিরভাগই চলছে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে। জেলায় লেগুনা আছে প্রায় দুইশ। এতো যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না ২৪ ফুটের প্রশস্ত সড়ক।

 

সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক সমিতির সভাপতি খসরুল আলম বললেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ৬৫ কিলোমিটার পথ আরও ২০ বছর আগে বাসে যাতায়াত করতে সময় লাগতো সোয়াঘণ্টা। এখন লাগছে পেঁৗনে দুইঘণ্টা। সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায়, এই যন্ত্রণায় পড়েছেন সুনামগঞ্জবাসী।

 

আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্য, জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বললেন,  সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ককে দ্রুত চারলেনে উন্নীত করতে হবে। সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি সড়ককেও স্থানে স্থানে চারলেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।

 

সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ্ বললেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের দুটি স্থান মিলে পাঁচ দশমিক আট কিলোমিটার সড়ক চারলেন করার দরপত্র ২০২৪ সালের জুলাই মাসে হয়েছিল। এই দরপত্র প্রক্রিয়া সিলেট তত্ত্বাবধায়ক অফিস থেকে হয়েছিল। দরপত্র গ্রহণ শেষে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাবার কথা। এখনো এটি সরকারি ক্রয় কমিটিতে যায় নি বলে জেনেছি আমরা।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি