পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। তবে তাদের দেওয়া ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন না পাওয়ায় সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু আটকে আছে। এই প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষার কারণে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, যা অনেক নাগরিকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে যারা চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে যেতে চান।

 


 

এমতাবস্থায় পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। 

 

 

জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনকে পাসপোর্ট ইস্যুর প্রধান ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এই দুটি তথ্য সঠিক থাকলে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ উদ্যোগ নেয়।

 

 

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকদের অধিকার এবং এটি পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া অপ্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে পাসপোর্টের আবেদন করলে এটি সরাসরি পোস্ট অফিসে চলে আসে এবং প্রতিটি নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

 

 

জানা, পুলিশের প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতার কারণে সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

 

 

এর পরিপ্রেক্ষিতে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের বিশেষ শাখার কাছে আটকে থাকা পাসপোর্টের তথ্য চাওয়া হয়। জানা যায়, শুধুমাত্র পুলিশের প্রতিবেদনের অভাবে ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

 

আরও জানা গেছে, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার অলিখিত নিয়ম চালু হয়ে গেছে। যদিও কাগজে-কলমে নেই এমন কোনো নির্দেশ। অতীতে সরকারগুলো এই হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি।

 

 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীর বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমান ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে।

 

 

তিনি বলেন, কমিশন থেকে আমরা সুপারিশ করছি, চাকরি কিংবা অন্য সেবার ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন আর বাধ্যতামূলক না রাখতে। এটি কোথাও আর থাকবে না।

 

 

এদিকে, গত ১৯ নভেম্বর পুলিশ সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশ থেকে জানা গেছে, চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন সেদিন বলেন, ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করাই জরুরি এবং কারও রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত