সিলেটে আবারও ভয়ংকর রূপে ফিরে এসেছে ‘শিলং তীর’ নামের অবৈধ জুয়া। ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে পরিচালিত এই জুয়ার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনের শেষ সম্বল পর্যন্ত হারাচ্ছেন এই প্রতারণামূলক খেলায়।

 


সম্প্রতি এ জুয়াকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল ও এজেন্ট চক্র। এরই মধ্যে ব্যবসার মূলধন খুইয়ে দেউলিয়া হয়েছেন অনেকে, আবার কেউ গোপনে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকায় নেই। কঠোর অভিযানে নামার ফলে একের পর এক জুয়াড়ি ও দালাল গ্রেফতার হচ্ছে। পুলিশের পাল্টা তীরে  এখন বিদ্ধ ‌'শিলং তীর' জুয়াড়িরা।

 

গত ১৫ দিনে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ অভিযানে অন্তত ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি লাক্কাতুরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়। এর আগে, ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর নবাব রোডস্থ মজুমদারপাড়া থেকে ৫ জন, ৩১ জানুয়ারি একই স্টেডিয়াম এলাকা থেকে আরও ২ জন, ২৭ জানুয়ারি কালীঘাটে অভিযান চালিয়ে ৬ জন, ২৫ জানুয়ারি পশ্চিম কাজলশাহ থেকে ৩ জন এবং ২১ জানুয়ারি দক্ষিণ সুরমার মারকাজ পয়েন্ট থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

পুলিশ বলছে, ‘শিলং তীর’ জুয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযানে ধরা পড়লে এজেন্ট ও জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

জানা যায়, ‘শিলং তীর’ মূলত একটি লটারি-ভিত্তিক জুয়া, যেখানে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরের টিকেট বিক্রি করা হয়। বিজয়ী হলে বিনিয়োগের ৭০ গুণ টাকা ফেরত পাওয়া যায়। এই ‘লোভনীয়’ প্রলোভনে পড়ে বহু তরুণ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। একসময় সীমান্তবর্তী এলাকা জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে সীমিত থাকলেও, এখন পুরো সিলেট শহরেই এর বিস্তার ঘটেছে। প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিলং তীর একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। আমরা এটিকে নির্মূল করতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছি। এই জুয়ার সঙ্গে জড়িত কেউই রেহাই পাবে না।

 

তিনি জানান, ‘এই জুয়া মোবাইলে খেলা হয়, তাই হাতেনাতে ধরতে হয়। এজন্য কিছুটা বেগ পেতে হয়। জুয়ার এজেন্টদের আস্তানায় অভিযান করতে পারলে কিছু প্রমাণপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচলিত আইনে জুয়ার শাস্তি কম হওয়ায় এরা সহজে পার পেয়ে যায়।’

 

সচেতন মহল মনে করেন, শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান যথেষ্ট নয়।  


এই অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি জনগণকেও সতর্ক হতে হবে। নয়তো সিলেটের তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ