বাংলাদেশের সাফ জয়ী নারী জাতীয় দলের ফুটবলাররা ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে আর খেলতে চান না। সাবিনা খাতুনরা হুমকিও দিয়েছে একযোগে পদত্যাগের। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনকে (বাফুফে) চিঠিতে তার জানান, বাটলারের অধীনে খেলা দূর, অনুশীলনও করবেন না তারা। বাফুফেকে সেই চিঠিতে বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলে ধরেছেন সাবিনা খাতুন-মাসুরা পারভীনরা।
 

জানা যায়, সেই চিঠি পাওয়ার পর বাফুফের বিশেষ কমিটি বিদ্রোহী ফুটবলারদের কাছে জানতে চায়, চিঠিটি কে লিখেছে? বিদ্রোহী ফুটবলাররা জানান, জাপানে জন্ম নেয়া ও বড় হওয়া মাৎসুশিমা সুমাইয়া লিখেছেন সেই চিঠি। এমন খবর প্রকাশের পর সাফ জয়ী নারী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়ার জীবন হয়ে পড়েছে হুমকির মুখে। ক্রমাগত হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছেন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুমাইয়া পোষ্ট করে জানিয়েও থাকেন।


জানা যায়, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়ে আজ রাজধানীর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন জাতীয় নারী ফুটবলার সুমাইয়া। জিডি করার সময় সুমাইয়ার সঙ্গে ছিলেন বাফুফে মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমি।
 

বেশ কিছু দিন ধরে ব্রিটিশ কোচ বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিবেধ নিয়ে গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা। যা সমস্যা সমাধানে বাফুফে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। বাফুফের সমস্যা সমাধানে চেষ্টার মাঝেই হত্যা ও ধর্ষনের হুমকি নিয়ে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি পোস্ট করে থাকেন সুমাইয়া। ওই পোস্টে গেল কয়েকদিনে অনেকবার হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছেন দাবি করেন। সে সঙ্গে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, কেন তিনি একজন ফুটবলার হতে গেলেন? কারণ, একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেভাবে দেশকে পাশে পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে পাচ্ছেন না।

সুমাইয়া ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি সুমাইয়া। বাংলাদেশ নারী দলের একজন ফুটবলার। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থী হয়েও আমি স্কুল টুর্নামেন্ট দিয়ে ফুটবল শুরু করি এবং ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ জয়ী দলের অংশ ছিলাম। এটা আমার জন্য এক তিক্ত-মধুর যাত্রা।’
 

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি ফুটবল শুরু করি, তরুণ শিক্ষার্থীদের ফুটবলে আগ্রহী করতে, যাদের বাবা-মা শুধু পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে বলেন। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম চেষ্টা এবং সংকল্প থাকলে যেকোন বাধা পেরোনো যায়। কিন্তু আজ  আক্ষেপ নিয়ে বসে আছি- আক্ষেপ আমি আমার পড়াশুনা, আমার পরিবার, ঈদ ত্যাগ করে দেশের জন্য খেলেছি, কিন্তু কেউ আমাদের ত্যাগের প্রশংসা করেনি।’

ফুটবল খেলতে তার বাধা প্রসঙ্গে সুমাইয়া বলেন, ‘ফুটবল খেলতে আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে লড়াই করেছি। বিশ্বাস ছিল, বিপদে দেশ পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কেউ অ্যাথলেটসদের মানসিক স্বাস্থের কথা ভাবে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছি, তা বিবেচনা করে, আমি ও আমার সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটা চিঠি লিখে দেওয়ার মতো সামান্য যোগ্যতা আমার আছে। সেজন্য গত কিছু দিন ধরে, আমি লাগাতার মৃত্যু ও ধর্ষণের হুমকি পাচ্ছি। এমনভাবে এমন সব কথা বলা হয়েছে, তা আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না।’
 

হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি পেয়ে ট্রমাতে আছেন বলে উল্লেখ করেন সুমাইয়া, ‘আমি জানি না এই আঘাত থেকে সেরে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে আমি জানি যে নিজের স্বপ্ন  পূরণের পেছণে ছোটা কারোরই এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত না।’

 

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১৬