দলের নাম ভাঙিয়ে যেকোনো ধরনের অপকর্ম বরদাস্ত করবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি। শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে জেলার সাতটি উপজেলার বিএনপি ও পাঁচটি পৌর বিএনপির ইউনিটের আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলের হাইকমান্ডেরে এমন কঠোর বার্তা পৌঁছে দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, যেখানেই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যে কেউ কোনো অপকর্ম করবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা বিএনপির কাছে সুপারিশ পাঠাতে। সে যতবড় নেতা বা কর্মী হোক তাকে বহিষ্কার করা হবে। কোনও রকমের দুষ্কৃতিকারীকে বিএনপিতে স্থান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয় জেলা বিএনপি। এটি দলের হাইকমান্ডের কঠোর সিদ্ধান্ত। জেলা বিএনপির এখতিয়ারে যেটি তাকে সঙ্গে সঙ্গেই বহিষ্কার করা হবে। আর যেটি সাংগঠনিক এখতিয়ারে নেই সেটি বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করে পাঠিয়ে দেয়া হবে। জেলা বিএনপি কোনো বিতর্কিত কাজে জড়িত দুষ্কৃতিকারিকে কাউকে ছাড়া দিবে না বা ছাড় দিতে প্রস্তুতও নয়। কারণ বিএনপির সুফল ঘরে উঠার সময়ে তাদের জন্য আজকে দলের নাম পত্রিকায় শিরোনাম হবে,তা বরদাস্ত করা হবে না। এসব অপকর্মের দায় বিএনপি কাঁধে নিবে না। যেকোনো অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে চায় জেলা বিএনপি। শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয় দলের হাইকমান্ডেরে নির্দেশে প্রয়োজনে আইনগতও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটিই দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা। এটি সবাইকে মানতে হবে এবং দলের দায়িত্বশীল ইউনিটের নেতাদের সদা সজাগ দৃষ্টিতে রাখতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নির্দেশে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে জেলা বিএনপির আওতাধীন সকল দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এর আগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, বিএনপির পদ পদবি ব্যবহার করে বিতর্কিত যে কোন কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনোধরনের টেন্ডারবাজি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, জমিজমা দখলসহ যেকোনো ধরনের অনৈতিক এবং বেআইনি কাজে জড়িত থাকলেই তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন রাজপথে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে আনার জন্য আন্দোলন লড়াই সংগ্রাম করে অনেক ত্যাগ শিকার করেছে। দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছরে বিএনপির অসংখ্য অগণিত নেতাকর্মী এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাতে মামলা, হামলা, হয়রানির হয়েছেন। অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে শত জুলুম নির্যাতনসহ ঘুম, খুন হত্যার শিকার হয়েছেন। দেশের গণতন্ত্রের জন্য এতো শহিদের রক্তের বিনিময়ে নতুন এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেবে না বিএনপি। প্রয়োজনে দল আরও কঠোর থেকে কঠোর হবেন। অনেক লড়াই সংগ্রামে বিএনপি অত্যন্ত কঠিন সময় পার করে এ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু এ কঠিন সময় এখনো শেষ হয়নি। আমরা মনে না করি বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে গেছি বা ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে। স্বপ্রণোদিত বা প্রভাবিত হয়ে দলে পদ-পদবি ব্যবহার করে যে কেউ জড়িত থাকলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ জেলায় কোনো রকমের অন্যায় ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এদেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের প্রতিষ্ঠায় বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী জেল জুলুম শত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণতন্ত্র ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আতাহুতি দিয়েছেন আর এখন দলের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা মুখোশধারী কতিপয় দুষ্টুদের জন্য বিএনপির উজ্জ্বল ভাবমূর্তি জাতির সামনে বিনষ্ট হবে তা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। এদের দায় বিএনপি’র কাঁধে নেবে না। এটিই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুষ্পষ্ট কঠোর বার্তা।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে একটি নতুন সূর্য উদিত হচ্ছে। সেই সূর্য উদয়ের আগ মুহুতের্ই যদি আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি মারামারি এবং চাঁদাবাজি দখলবাজিতে লিপ্ত থাকবে,দলকে জাতির সামনে কলুষিত করবে,সে যতোবড়ই নেতা হোক না কেন তাকে বিএনপি কখনই ছাড় দিবে না।
তিনি বলেন, কিছু মিডিয়া রয়েছে,এখনও ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের দোসর হিসেবে কাজ করছে। কিছু চিহ্নিত আওয়ামী লীগার পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের সেই শাখা প্রশাখা এখনো রয়ে গেছে। এবং তারা এখনও প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সেজন্য আমাদের সুদৃঢ় ঐক্যই এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে। এ কঠিন সময়ে আমাদের আরও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ ই পাঁচ আগস্টের পরে ২০টিরও বেশি ক্যু করার অপচেষ্টা করা হয়েছে,সেটা আনসার লীগ হতে পারে, পুলিশের ভিতরে কাউন্টার ইন্টিলিজেন্স হতে পারে,বিভিন্ন রকমের ক্যু হওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। সেটা বার বার নৎসাত হয়েছে। তিনি বলেন,এদেশে যখনই গণতন্ত্র নৎসাত হয়েছে,গণতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে,তখনই বারবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এগিয়ে এসেছে। আমরা বলতে চাই,বিএনপি গণতন্ত্রের পরস্পরের পরিপূরক,এটা আপনাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। যখনই গণতন্ত্র বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে,বিএনপিই নেতৃত্বেই পুনরুদ্ধার হয়েছে। এটা পঁচাত্তরের পরে দেখেন,৯০ এ দেখেন সর্বশেষ কিছুদিন আগে গত সাড়ে ১৫ বছরের লড়াই সংগ্রামের অভিজ্ঞতা দেখেন। দেশের সতেরো বছরের আন্দোলন সংগ্রামের যে সুফল ঘরে উঠানোর সময় আমরা আমাদের দলের যারা দায়িত্বশীল নেতা রয়েছি। তাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে বিএনপির নাম কররে যাতে কেউ অপকর্ম না করতে পারে।
গত তিনদিন আগে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা:এজেডএম জাহিদ হোসেন বিশেষ করে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সিলেট বিভাগের সকল জেলা বিএনপিসহ সব জেলার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিলেন। ওই সভায়ও আরও কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন ,বিগত সতেরো বছরে প্রায় ২৮ লক্ষ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে কিন্তু ৯৫টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। পৃথিবীতে কোনো যুদ্ধকালীন অবস্থায় কোনো শিশুকে মারা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ৬৪ জন শিশুকে এই ৫ আগস্টের আগে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ১৭ দিনের জেনসাইডে প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে পর্যন্ত গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৩৪ হাজার মানুষ এখনও হয় অর্ধপঙ্গু কেউ পূর্ণাঙ্গ পঙ্গুত্ববরণ করছে। প্রায় তিনহাজার মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। কারো এক চোখ কারো দু’চোখ।
তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সতেরো বছরের অনেক ত্যাগ,ক্ষোভ,রাগ অভিমান থাকতে পারে কিন্তু আজকে একটা জায়গায় অত্যন্ত আনন্দিত যে পুলিশ আমাদেরকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় না। বাসা থেকে বের হওয়ার পর ডিবি পুলিশ এসে খোঁজ নেয় না। এ জায়গায় তো আমরা নিরাপদ রয়েছি।
রিপন বলেন, বিগত সাড়ে পনেরো বছর বিএনপির আন্দোলনটাই ছিল গণতন্ত্রের জন্য। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। আজকে দেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এই সংস্কার সংস্কার নামক যে টালবাহানা চলছে,জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অনতিবিলম্বে যেন বাংলাদেশের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়,এটিই এখন দেশবাসীর একমাত্র দাবি।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন,কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেদোয়ান খান,শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম সিদ্দিকি, শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো.শামীম আহমেদ,সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিল্লাদ হোসেন মিরাশদার,রাজনগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কবির মিয়া,বড়লেখা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন,পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মীর মখলিছুর রহমান,কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অলি আহমদ খান,মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো.মারুফ আহমদ ও পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মজুমদার ইমন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/লাভলু