ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সালে ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আলীর “লিভার: জানুন এবং ভালো থাকুন” গ্রন্থটি লিভার স্বাস্থ্যের উপর একটি বিস্তৃত অনুসন্ধান উপস্থাপন করে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশের হেপাটো-বিলিয়ারি-প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের পথিকৃৎ। তিনি বারডেম হাসপাতালে দেশের প্রথম হেপাটো-বিলিয়ারি-প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং উক্ত হাসপাতালে ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রথম সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করেন। ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী তাঁর বিশাল চিকিৎসা দক্ষতা বইটিতে সহজবোধ্য উপায়ে তুলে ধরেছেন।

বইটি মানবদেহে লিভারের মৌলিক কার্যাবলী পদ্ধতিগতভাবে আলোচনার মাধ্যমে শুরু করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন লিভার সংক্রান্ত অবস্থার উপর বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। অধ্যাপক আলী লিভার, গলব্লাডার, পিত্তনালী, অগ্ন্যাশয় এবং লিভার ফাংশন টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠকের বোঝার সুবিধা করে তুলেছে। বইটি লিভার স্বাস্থ্যের উপর একটি তথ্যবহুল ও সহজবোধ্য নির্দেশিকা, যা চিকিৎসা জ্ঞানকে ব্যবহারিক প্রয়োগের সাথে দক্ষভাবে সংযুক্ত করেছে। লিভারের কার্যাবলী, রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে এর বিশদ আলোচনা বইটিকে চিকিৎসক, গবেষক এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য মূল্যবান সম্পদে পরিণত করেছে। তদুপরি, ব্যবহারিক সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে এটি শুধু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের দক্ষতাই বৃদ্ধি করে না, বরং সাধারণ জনগণকে লিভার স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আলী অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লিভার সম্পর্কিত তথ্য পদ্ধতিগতভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য। বইটির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হেপাটাইটিস টাইপ ‘এ’ থেকে ‘ই’ পর্যন্ত নিবেদিত, যেখানে চিকিৎসা পরিভাষার পাশাপাশি ব্যবহারিক ব্যাখ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। লেখক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বিশ্বব্যাপী এবং বিশেষ করে বাংলাদেশে হেপাটাইটিসের বিস্তার সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের আলোকে আলোচনাগুলি প্রসঙ্গায়িত করেছেন। বইটিতে সাধারণ ভুল ধারণাগুলো সংশোধনের জন্য প্রশ্নোত্তর বিভাগ সংযোজিত হয়েছে, যা চিকিৎসাগতভাবে সঠিক তথ্য প্রদান করে। এছাড়া, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, NAFLD, সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার এবং জন্ডিসের মতো বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে প্রতিরোধমূলক কৌশলসহ ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিসের জটিলতা, লিভার রিসেকশন ও পিত্তনালী পুনর্গঠনসহ অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত বিষয়, প্যানক্রিয়াটিক রিসেকশন এবং বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রের মতো জটিল বিষয়গুলিও বইটিতে আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট পরবর্তী জীবন অধ্যায়টি সকল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট গ্রহীতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করি।

যদিও বইটি প্রধানত প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ও অস্ত্রোপচারের উপর আলোকপাত করেছে এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তনের মতো বিকল্প পদ্ধতিগুলোর উপর কম গুরুত্বারোপ করেছে, এটি বিশেষায়িত চিকিৎসা জ্ঞান ও সাধারণ পাঠকদের জন্য ব্যবহারিক প্রয়োগের মধ্যে দক্ষতার সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। কিছু প্রযুক্তিগত পরিভাষা সাধারণ পাঠকদের জন্য কঠিন হতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে, ডা. আলীর পদ্ধতিগত উপস্থাপনায় বইটি লিভার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আগ্রহী চিকিৎসা পেশাদার ও সাধারণ জনগণের জন্য একটি মূল্যবান সংযোজন।

বইটি পড়ার পর একজন পাঠক হিসেবে আমি লিভার সম্পর্কে আরও বিস্তৃত ও স্পষ্ট ধারণা লাভ করেছি। লিভার স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে আমাকে নিজের সুস্থতা সম্পর্কে আরও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি আগে থেকেই চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

তবে, বইটির বিষয়বস্তুর গভীরতা ও উপস্থাপনা প্রশংসনীয় হলেও, বাঁধাইয়ের ক্ষেত্রে আরও কিছু যত্নের অবকাশ রয়েছে। প্রকাশনার এই দিকটি উন্নত হলে বইটির স্থায়িত্ব ও পাঠকের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।

*ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।