গ্রীষ্মের খরতাপে যখন প্রকৃতি হাঁফিয়ে ওঠে, তখনই যেন মায়ার পরশ নিয়ে ধরা দেয় জারুলের রঙিন সাম্রাজ্য। বৈশাখের রৌদ্রদগ্ধ দিনে, যখন ধানের ক্ষেতের সোনালি ঢেউয়ের মাঝেও গরমের ধোঁয়া ওঠে, ঠিক তখনই গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে জারুল ফুলের কোমল স্পর্শ।
সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে থাকা বেগুনি রঙের জারুল ফুলগুলো যেন আকাশের নীলের সাথে গোপন বন্ধনে মিশে গেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে দুলতে থাকা জারুলের মুকুলগুলো পথিকের হৃদয়ে এক অপার্থিব ছোঁয়া দিয়ে যায়। স্বাগত জানায় পথিককে। কিন্তু আধুনিক ব্যস্ত জীবনের হাজারো দৌড়ে হয়তো কেউ থামে না, তবুও জারুল তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয় অকাতরে, নিঃশব্দে।
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের পাড়া-মহল্লার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা জারুল গাছগুলো যেন প্রেয়সীর অভিমানের মতো—নীরবে আহ্বান জানায়, দাঁড়াও, একটু থেমে চেয়ে দেখো, একটু মন দাও! এমন সৌন্দর্য দেখে কবির হৃদয় হঠাৎই ব্যাকুল হয়ে ওঠে, সাহিত্যের অজস্র ছন্দ যেন আপনাতেই ঝরে পড়ে কাগজের পাতায়।
তাইতো জারুল-বরুণের এমন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি ফয়জুন্নেছা কাকলী বলেন, জারুলফুলে ছেয়েছে বেশ/ ছড়ায়েছে রঙের বাহার/ জড়ায়েছে আদুরে কেশ/ বরুণফুলে মনোহারী শোভা/ বৈশাখী রুদ্ররূপ তবু/ দিগন্ত ছুঁয়েছে আভা।
একদিকে জারুল ও বরুণ ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, অন্যদিকে বৈশাখের কঠিন রুদ্রতা – এই দুই মিলে এক অনন্য বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিচিত্র গড়ে উঠেছে কবিতায়।
জারুলের এই রঙিন মায়াজালে বাঁধা পড়ে সময়ও যেন একটু ধীরে চলে। প্রকৃতির এই রূপের ভিড়ে বানিয়াচংয়ের জনপদ হয়ে ওঠে এক খণ্ড কবিতা—যেখানে প্রতিটি জারুল ফুলের হাসিতে লুকিয়ে থাকে অমর ভালোবাসার গল্প, অজানা অপেক্ষার কাব্য।
এই গ্রীষ্মে জারুল ফুলের এমন নীরব প্রেমের আহ্বান কে-ই বা উপেক্ষা করতে পারে?
সিলেটভিউ২৪ডটকম/জসিম/এসডি-১৪