হাসিনা সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে গত ২৩ আগস্ট নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি) এবং ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্যদের নতুন রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
আর সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে জনতা পার্টি বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে আট মাসে ২৪টি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান দলগুলোর প্রতি অনাস্থা ও গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন পরিস্থিতির সুযোগ নিতেও গঠিত হচ্ছে নতুন নতুন দল।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক বলেন, ‘প্রথমত বাংলাদেশে প্রধান দুটি দল ছিল। সেই ধরনের একটা প্রচলিত চিন্তা থেকে মানুষজন বের হচ্ছে। আমরাও শক্তিমান, আমরা অনেক কিছু করতে পারি, আমরা রাজনীতি করতে পারি—এ ধরনের একটা ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্মের যারা নেতৃত্বে যেতে যাচ্ছে, তারা আসলে কোনো একক নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখছে না। ফলে সবাই ভাবছে, আমিই তো নেতৃত্ব দিতে পারি। অর্থাৎ বড় ধরনের একক নেতৃত্বের ধারণাকে অনেকভাবে আঘাত করা হয়েছে। ফলে ছোট ছোট নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, যার যার মতো করে ছোট ছোট দল গঠন করছে।’
কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মানুষের একসময় কথা বলার অধিকারটা ছিল না। তারা তাদের কথাটা বলতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন গ্রুপ তাদের কথাটা বলার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক পরিসরে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতজন টিকে যাবে সেটা পরের কথা। কিন্তু আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল গঠন করার যে ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে এবং নিজেদের কথা তারা বলতে চাইছে, এটা খুবই ভালো।
অনেকগুলো রাজনৈতিক দল যখন আসছে, তার মানে বিদ্যমান দলগুলোকে তারা তাদের প্রতিনিধি মনে করে না। যদি মনে করত, তাহলে এতগুলো দল গঠন করা হতো না।’
রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য দল গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান ইসমাইল সম্রাট। এই দলটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আত্মপ্রকাশ করে।
ইসমাইল সম্রাট বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশে বড় একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরে গেছে, সেহেতু রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমরা সেই শূন্যতা পূরণের জন্য আমাদের দল ঘোষণা করেছি।’
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমজনতা দলের সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা গণ অধিকার পরিষদ ভাঙার পর থেকে পুরো সময় ধরে ভারতের আগ্রাসনবিরোধী নানা ধরনের প্রোগ্রাম করে গেছি। আমরা দেখেছি, কোনো রাজনৈতিক দলই ভারত নিয়ে এভাবে এই বিষয়গুলো নার্সিং করে না, যাদের সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে পারি। এই বাস্তবতায় আমাদের এই কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য আলাদা একটি দল অবশ্যই প্রয়োজন।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক