মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে খেলার মাঠে গোলবার বসানোকে কেন্দ্র করে টানা চারদিন ধরে চা শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে তিন শতাধিক চা শ্রমিক পরিবারের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি সাপ্তাহিক তলব-বারের বেতন পরিশোধ না করায় চা শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্বিষহ। সেই সাথে ভূগছেন ভয় আর বদলি আতংকে।
শুক্রবার (৯ মে) সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের বিলাসছড়া পরীক্ষণ খামারের পাশের শ্রমিক কলোনীতে চা শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে এসব চিত্র ফুটে উঠে। এসময় অনেক চা শ্রমিক ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এসময় কথা হয় ওই কলোনীর চা শ্রমিক রিনা বোনার্জি, আদরি তাঁতি, বিশ্বখেতু তাঁতি, চন্দ্র মৃধা, আব্দুস শহীদ জানান, চা বাগানে স্কুল পড়ূয়া বাচ্চারা খেলাধুলার করার জন্য বাগানের মাঠে সরকারী বরাদ্ধের গোলবার বসানোকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ বন্ধ রেখেছেন। গত ৬ মে থেকে কাজে যোগদান করতে নিষেধ করায় বেশ বিপাকে পড়েছি আমরা। কাজ বন্ধ থাকায় ৭ মে বুধবার সাপ্তাহিক তলব-বারের বেতনও পরিশোধ করেনি বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে অনাহারে দিন কাটছে আমাদের। আবার অনেক পরিবারের একজনের আয়ের ওপর নির্ভশীল পরিবারের ৫-৬ সদস্য।
গত (তলববারে) সাপ্তাহিক বেতন না হওয়ায় তারা গত সপ্তাহের বাজার করতে পারেনি বলে জানান তারা।
এছাড়া খামারের যোগালী সর্দার মনোরঞ্জন গোয়ালাকে হঠাৎ করে বদলির অর্ডার করায় অন্য শ্রমিকরা বদলি আতংকে রয়েছেন। পাশাপাশি অনেক স্থায়ী শ্রমিক অবসরে যাবার পর ওই পরিবারের অন্য সদস্যকে বদলি শ্রমিক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না দেওয়ায় এসব শ্রমিক পরিবোরের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভয়ে কিছু বলছেন না এমন কথাও জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা।
মহাজিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণী পড়ুয়া বিশাল তাঁতি নামের এক চা শ্রমিক সন্তান বলেন, ‘খামারের মাঠে এলাকার সকল বাচ্ছারা খেলাধুলা করে। মাঠে ফুটবলের কোনো গোলবার ছিল না, তাই সরকারী ভাবে বরাদ্ধের জন্য উপজেলায় এলাকাবাসী পক্ষে ছেলেরা আবেদন করে গোলবার দেবার জন্য। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় মহিলা মেম্বারের মাধ্যমে দুইটা গোলবার মাঠে আসে। সেটি স্থাপন করার অনুমতির জন্য বিটিআরআই পরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়। ৭/৮ দিন পার হলেও তিনি অনুমতি না দেওয়ায় ছেলেরা মিলে গোলবার স্থাপন করা হয়। এর পর তিনি এসে ছেলেদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। এরপরেই তিনি কাজ বন্ধ রাখার ঘোষনা দেন।’
চা শ্রমিক স্বপ্না আক্তার (৬০) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার পরিবারের আমি’ই একমাত্র বাগানের পারমেন্ট শ্রমিক। প্রতিদিন হাজিরা পাই ১৭৮ টাকা। আমার পরিবারে ৩ মেয়ে আর অসুস্থ স্বামী আমার রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চারদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। গত তলববারে আমাদের সাপ্তাহিক মজুরী পাইনি। আমার থাকার ঘরটাও জরাজীর্ণ। মাটির দেয়াল কাত হয়ে আছে, যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে।’
আমার যাওয়ার জায়গা নাই বলে চোখের পানি ফেলেন তিনি।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খামারের যোগালী সর্দার মনোরঞ্জন গোয়ালা বলেন, ‘ছেলেরা খেলার মাঠে সরকারী বরাদ্ধের গোলবার বসানোর জন্য আমাকে জানায়, আমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে বলি। পরে তারা আবেদন করে। যেদিন বাচ্চারা গোলবার বসায় ওইদিন আমি এলাকাতে ছিলাম না। পরিচালক মহোদয় এসে আমাকে পাননি। তারপর আমাকে কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানে বদলির আদেশ দেন। সেটি আমি হাতে পেয়েছি পাই (৫মে রবিবার)। পরে (৬মে সোমবার) আমাকে হঠাৎ অফিস থেকে বলা হয় টি বোর্ডে যেতে চেয়ারম্যান স্যার ডাকছেন। আমি চট্টগ্রামে চেয়ারম্যান স্যারের সাথে দেখা করি। ওই দিন’ই আমাকে সেখানে যোগদান করতে বললে সেখানে যোগদান করে বাড়িতে চলে আসি। এখন বলা হচ্ছে গোলবার উঠিয়ে নিলে আমাকে বিবেচনা করা হবে। আমি এলাকার সবাইকে বলেছি গোলবার তুলে নেবার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘৬মে থেকেই শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সাথে গত তলববারের পেমেন্ট বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে অনাহারে আছে বাগানের শ্রমিকরা।’
এ ব্যাপারে বিলাসছড়া পরীক্ষণ খামারের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
বিলাসছড়া পরীক্ষণ খামারের সহকারী (গবেষণা) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসলে সঠিক আমি বলতে পারবো না কি কারণে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, বিটিআরআইয়ের পরিচালক ইসমাইল স্যারের সাথে কথা বলতে ভালো হয়।’
বিষয়টি জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিলাশছড়া পরীক্ষণ খামারে এই মূর্হতে কোন সমস্যা নাই, চেয়ারম্যান স্যার সমস্থ কিছু সমাধান করে দিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর বেশি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান স্যারের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হবে।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/সাইফুল/এসডি-২১