বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)-এর বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা ও উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠেছিল নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের স্টারলিং বাংলাবাজার । প্রবাসে দেশীয় সংস্কৃতির এক চমৎকার চিত্রায়ন যেন এদিন প্রত্যক্ষ করলো নিউইয়র্কের বাঙালি সম্প্রদায়।

রবিবার (১০ মে) বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই আনন্দঘন শোভাযাত্রা ও উৎসবে হাজারো প্রবাসী বাঙালি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অংশ নেন।

দুপুর সাড়ে তিনটায় বাফা স্টুডিওর সামনে থেকে বর্ণিল বৈশাখী শোভাযাত্রা শুরু হয়। বর্ণিল পোশাকে সেজে ওঠা নারী, পুরুষ ও শিশুরা ঢাকঢোলের বাদ্যির সঙ্গে নেচে গেয়ে স্টারলিং এভিনিউ ধরে এগিয়ে চলে। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানা প্রতিচ্ছবি প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। ওভাল পার্ক ঘুরে শোভাযাত্রাটি অলমস্টেড এভিনিউয়ের উৎসব মঞ্চে এসে শেষ হয়।


শোভাযাত্রা শেষে অলমস্টেড এভিনিউতে শুরু হয় বৈশাখী উৎসব। মেলায় বসেছিল বিভিন্ন পণ্যের পসরা। দেশীয় পোশাক, নজরকাড়া গহনা, হাতে তৈরি শিল্পকর্ম ও শিশুদের রঙিন খেলনায় সেজে উঠেছিল প্রতিটি স্টল। আগত দর্শনার্থীরা উৎসুক মনে প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন এবং পছন্দের জিনিস কেনেন।

স্থানীয় শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্র সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত, বৈশাখীর সুর, নৃত্য এবং কবিতার মনোমুগ্ধকর ছন্দে উৎসবের আমেজ আরও গাঢ় হয়।

বাফার শিক্ষার্থী ছাড়াও সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আফতাবুজ্জামান স্পন্দন, যোগমায়া, তারেক, সিয়াম শাহাদাত, বুলা আফরোজ, শারমিন তানিয়া, ইশরাত শার্মি ও তাহমিনা শহীদ প্রমুখ। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন মারিয়া স্মৃতি, সাচী পেনে ও রাধিকা সামছুন।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শামিমারা বেগম ও নাসরিন সাহানা।

অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের সিনেটর নাথালিয়া ফার্ন্দাদেজ, কাউন্সিল ওমেন আমান্দা ফারিয়াসসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা চারজন গুণী নারীকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। সিনেটর নাথালিয়া ফার্নান্দেজের হাত থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রক্লেমেশন গ্রহণ করেন শামিমারা বেগম ও ফারজানা ইয়াসমিন। কাউন্সিল ওমেন আমান্দা ফারিয়াস তাহমিনা শহিদ, ক্লারা রোজারিও, দুররে মাকনুন নবনী ও নাসরিন সাহানার হাতে তুলে দেন সাইটেশন।

অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সিরাজ উদ্দিন আহমেদ সোহাগ, সালেহ আহমেদ, সাইদুর রহমান লিংকিন ও মুজাহিদ আনসারী প্রমুখ।

বৈশাখী উৎসবের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বাফার কর্ণধার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করা, বিশ্ব মঞ্চে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরা এবং সকলের মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি করাই এই আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য।’

সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টারলিং বাংলাবাজার প্রবাসী বাঙালিদের আনন্দ আর উল্লাসে মুখরিত ছিল, যা প্রমাণ করে প্রবাসেও বাঙালি সংস্কৃতি তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এসবিআর/পিডি