প্রকাশিত: ২৯ জুন, ২০২২ ১৬:০০ (বৃহস্পতিবার)
স্বরণকালের বন্যায় কেড়ে নিল মৎস্য খামাড়ি হাবিবুরের স্বপ্ন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে স্মরণকালের বন্যায় কেড়ে নিল মৎস্য ও পোল্টি খামাড়ী হাবিবুর রহমানের স্বপ্ন। মৎস্য খামাড়ি হাবিবুর রহমান উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বোরখাড়া গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। অনেক স্বপন নিয়ে এক একর ৬১ শতাংশ জায়গার ভিতর একটি পুকুর করেন তিনি। কয়েক দফায় পুকুরের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মাছও চাষ করেন তিনি।

 

অপরদিকে একই সঙ্গে পুকুরের মাচার উপর পোল্টি মুরগীর খামার এবং পুকুর পাড়ে বাচ্চার বডিং ফার্ম গড়ে তুলেন তিনি। কয়েক দফা বাদাঘাট কৃষি ব্যাংক থেকে এসএমই লোনও নেন তিনি। কিন্তু তার স্বপ্ন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সর্বনাশা বন্যায় শেষ করে দিয়েছে তাকে। মৎস্য ও পোল্টি চাষী হাবিবুর এখন কিভাবে ব্যাংকের লোন পরিশোষ করবেন এই ভেবে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। শুধু হাবিবুর রহমান নয় এ চিত্র পুরো উপজেলার মাছ চাষী ও পোল্টি ফার্ম চাষীদের।

 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় সরকারী হিসেবে ছোট বড় ৪৩৫ টি পুকুর রয়েছে। সব পুকুরই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গেল মাসের ১৪ জুন বৃহস্পতিবার রাতের বয়াল বন্যায় পুকুর তলিয়ে এবং ভেসে প্রায় ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বোরখাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে রাস্তার পাশে এক একর ৬১ শতাংশ জমির মধ্যে হাবিবুর রহমান ও পোল্টি ফার্ম নামে একটি খামাড়ি গড়ে তুলেন মৎস্য খামাড়ি হাবিুবুর রহমান। চলতি বন্যার পানিতে পুকুরটির পাড় বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে এবং পোল্টি খামারের মাচাটি পুকুরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

 

পুকুর পাড়ে হাবিবুর রহমান জানান, ১৯১৯ সালে বাদাঘাট কৃষি ব্যাংক থেকে প্রথমে এসএমই লোন নেন দুই লাখ টাকা। এই টাকা দিয়েই পুকুর ও পোল্টি ফার্ম এক সঙ্গে গড়ে তুলেন তিনি। ব্যবসাও ভাল হচ্ছিল। ২০২০-২১ সালে পুরাতন টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে নবায়ন করে পুনরায় তিন লাখ টাকা লোন নেন তিনি। এই লোনের টাকা দিয়েই পুকুরে ২ লাখ টাকার বিভিন্ন পোনা মাছ ও এক হাজার পোল্টি মোরগ দিয়ে ফার্ম করেন তিনি। বডিং ফার্ম থেকে ছোট ছোট বাচ্চা বড় হয়ে দুই হাজারে পরিণত হয় তার। পুকুরের মাছগুলোও বড় হয়েছিল। আশা ছিল কিছুদিনের মধ্যে পুকুর থেকে মাছ বিক্রি এবং মুরগী বিক্রি করে লাভবান হয়ে ব্যাংক থেকে আনা লোন পরিষদ করবেন তিনি। কিন্তু চলতি বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে মৎস্য খামাড়ি হাবিবুর রহমানের।

 

হাবিবুর জানান, তার পুকুর থেকে ৫ লাখ টাকার মাছ এবং ৩ লাখ টাকার পোল্টি মোরগ সহ ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন তিনি কি ভাবে ব্যাংকের লোন পরিশেষ করবেন এই ভেবে রাতদিন কাটছেনা। তিনি এখন ৫ মেয়ে ও তিন ছেলে বেখায় পড়েছেন।

উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য দুলাল মিয়া জানান, এবারের বন্যায় মৎস্য ও পোল্টি খামাড়ি হাবিবুর নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার পুকুরে থাকা কয়েক লাখ টাকার মাছ ও পোল্টি মোরগী পানিতে ভেসে ও মরে গেছে।

 

তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার সারোয়ার হোসেন জানান, এবারের বন্যায় উপজেলার ছোট বড় প্রায় ৪৩৫টি পুকুর পানিতে তলিয়ে এবং ভেঙ্গে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার মাছ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠের সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরে আমরা সরকারের কাছে তথ্য পাটিয়েছি।

 

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, মৎস্য খামাড়ি হাবিবুরের মতো উপজেলার অনেকেই চলতি বন্যায় পুকুর, পোল্টি মোরগী হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন। ক্ষতিক্ষতির প্রতিবেদন আমরা উপর মহলে পাঠাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে সময়সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ্যদের পুর্নবাসন করা হবে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/এমএআর/এসডি-০৮