প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৯:২৭ (মঙ্গলবার)
বদলে যাচ্ছে নাজিরবাজার, লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশ ঘেষে গড়ে উঠা দক্ষিণ সুরমার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাজার ‘নাজিরবাজার’। বাজারটিতে হাট বসে সপ্তাহে দু’দিন- শুক্র ও সোমবার। এ দুই দিন জেলার দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর- এই তিন উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের পা পড়ে নাজিরবাজারে, করেন বাজার-সদাই।

বাজারটি এত ব্যস্ততম হওয়া সত্ত্বেও স্থাপিত হওয়ার দীর্ঘ ৭০ বছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। তবে অবশেষে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার- বিশেষ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহিত হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নাজিরবাজারের আশপাশ গ্রামবাসীর জন্য এসেছে সুখবর। বর্তমান মাছ ও সবজিবাজার ভেঙে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন। যেখানে থাকবে মাছ ও সবজিবাজার এবং নিত্যপণ্যের দোকানগুলো। এছাড়াও ভবনটিতে বরাদ্দ থাকবে উদ্যোক্তা নারীদের জন্য দোকানকোঠা। ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের এই উন্নয়নপ্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে নাজিরবাজার।

জানা গেছে, শীঘ্রই শুরু হবে এ প্রকল্পের কাজ। এ লক্ষ্যে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাজারটি পরিদর্শন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি টিম। এসময় টিমের সদস্যরা জানান- নকশা তৈরি শেষে ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শীঘ্রই এ প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কাজের সময় ধরা হয়েছে ৯ থেকে ১১ মাস। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর বৃহত্তর নাজিরবাজারবাসী বেশ উপকৃত হবেন। বাজারটিতে বেড়ে যাবে আশপাশ আরও অনেক গ্রামের বাসিন্দার আনাগোনা। আরও বিস্তৃতি ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান- উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৎক্ষালীন স্থানীয় ইউপি মেম্বার, বিশিষ্ট শালিসি ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবী মুসলিম মিয়া এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দক্ষিণ সুরমার দক্ষিণ সীমানায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কয়েকটি টং দোকানের মাধ্যমে গড়ে তুলেন ছোট্ট একটি বাজার। নাম রাখা হয় ‘নাজিরবাজার’। সময়ের বিবর্তনে মহাসড়কের দুপাশে একসময় গড়ে উঠে কাঁচা-পাকা অনেক দোকান। ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটান স্থানীয়রা। ঐতিহাসিক এ বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে রয়েছে চার শতাধিক দোকান। আছে সরকারি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক, দুটি বেসরকারি এজেন্ট ব্যাংক, পোস্ট অফিস, দুটি স্কুল ও একটি টাইটেল ক্বওমি মাদরাসা।

এতকিছুর পরও বাজারটি কেমন যেন অনেকটা উন্নয়নহীন। বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গড়ে উঠা মাছ ও সবজি বাজারে বর্ষা মৌসুমে কেনাকাটা করতে গিয়ে মানুষকে পোহাতে হয় অনেক ভোগান্তি। সামান্য বৃষ্টি হলেই সবজি ও মাছ বাজারের প্রতিটি গলিতে থাকে কাদাপানিতে থৈ থৈ অবস্থা। টিনশেড ছাউনি ঘরের চালা দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। এতে ব্যবসায়ীদের হয় কষ্ট। এছাড়াও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাটবারে মাছ ও সবজিবিক্রেতারা বসে পড়েন বাজারের মূল রাস্তাগুলোতে। ফলে যান ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে এবার অবসান হতে যাচ্ছে সেসব কষ্ট আর ভোগান্তির। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি থাকা অবস্থায় প্রায় ৫ বছর আগে তাঁর কাছে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মুহিদ হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা নাজিরবাজারে সরকারি উন্নয়নবরাদ্দের জন্য জোর দাবি জানান। তাদের দাবিকে মূল্যায়ন করে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নাজিরবাজারে সরকারি অর্থায়নে ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেতে সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালান এবং বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন। মৃত্যুর আগেই তিনি বরাদ্দ পেতে সকল কাজ এগিয়ে রেখে যান। এতে সহযোগিতা করেন লালাবাজার ইউনিয়নের কৃতিসন্তান সাবেক সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

সব প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। শীঘ্রই এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে সিলেটভিউ-কে বলেন- ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নাজিরবাজারে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের ৬ তলা ভবন নির্মিত হবে। প্রথম ধাপে দুই তলা সম্পূর্ণ করা হবে। নিচতলায় কোনো দোকানকোঠা হবে না, সবজি ও মাছ বাজারের  জন্য খোলা রাখা হবে। দুতলায় হবে ১২টি দোকান। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এগুলো ভাড়া নেবেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্যও দোকান বরাদ্দ থাকবে। নারীদের জান্য থাকবে আলাদা শৌচাঘার। 

তিনি আরও বলেন- এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। এটি শেষে হবে ওয়ার্ক অর্ডার। এরপরই শুরু হবে কাজ। কাজ শুরু হতে দুই-আড়াই মাস সময় লেগে যেতে পারে। কাজের মেয়াদ ৯ থেকে ১১ মাস।

উল্লেখ্য, শনিবার নাজিরবাজারে সরকারি ভবন নির্মিতব্য স্থানটি পরিদর্শন করেন এলজিইডি’র যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর, ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (ডিপিডি) মামুন হোসেন ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাখন চন্দ্র সূত্রধর।

এসময় স্থানীয়দের মধ্য থেকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মুহিত হোসেন, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম মনির, বিশিষ্ট মুরুব্বি সফর আলী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী তহুর আলী ও ইলিয়াছ আলী, সাবেক ছাত্রনেতা সেবুল আহমদ ও সাংবাদিক মো. রেজাউল হক ডালিম প্রমুখ। 

পরিদর্শনকালে এলজিইডি টিমের সদস্যরা স্থানীয়দের মতামত ও পরামর্শ নেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম