প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০০:০০ (শুক্রবার)
জৈন্তাপুরে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকায় অবাধে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব। পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশেই সীমাবদ্ধ৷ দেদারছে চলছে পাহাড় কর্তন৷

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে ৫০-৬০ ফুট উঁচু টিলা কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সমান করা হচ্ছে। আর পাহাড় ও টিলা কাটা মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নদী, পুকুর ও নিচু জমি। প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যান। মাটির যোগান দিতে বিশাল কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তবে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে নেই কোন আইনগত ব্যবস্থা৷ পাহাড় কেটে মাটি রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাত ৮টার পর থেকেই কুপি জ্বালিয়ে হরিপুর এলাকায় চলে টিলা কাটা। পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, উপজেলা প্রশাসন এবং নিরব ভূমিকায় রয়েছেন৷ সচেতন জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক এমরান হোসেন ১০ জানুয়ারী পাহাড় কর্তনকারী উপজেলার ফতেহপুর ইউপির দলইপাড়া গ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের ছেলে ওয়ারিছ উদ্দিন, উপরশ্যামপুর গ্রামোর ইয়াকুব আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, ফতেহপুর বাগেরখাল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে হারিব আলী একই গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে মিছবাহ উদ্দিন, হরিপুর গ্রামের হাজি নুর মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী, একই গ্রামের সেলিম আহমদ, হেমু ভাটপাড়া গ্রামের রহমত উল্লার ছেলে আমির উদ্দিন, চিকনাগুল ইউনিয়নের ঘাটেরচটি গ্রামের হামিদ আলীর ছেলে মছদ্দর আলী একই গ্রামের মছদ্দর আলীর ছেলে মো. শাহীন এর বিরুদ্ধে নোটিশ জারী করেন৷ কিন্তু নোটিশ প্রাপ্তির পরও চক্রটি তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে পরিবেশের নোটিশ কোন বাঁধা হয়নি বরং তাদের আরও সহায়ক হয়েছে৷

উল্লেখিত নোটিশ প্রাপ্তির পর চক্রের সদস্যের নোটিশকে অবলম্বন করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ তাদের একজন বলেন ‘আমার কিছু নিচু জায়গা আছে তা ভরাট করার জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি।

পরিবেশবিদ আব্দুল হাই আল হাদী জানান, সিলেটের উত্তর পূর্বাঞ্চল ভূতাত্তিক পাহাড়ি অঞ্চল। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উন্নয়নের কাজে ১৯৯৬ সালে পাহাড় ও টিলার বিশাল অংশ বিলিন করে দেয়া হয়। বর্তমানে যে টিলা গুলো রয়েছে তা বিপন্ন হয়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়কাটা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধষে হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে।তাই তিনি পাহাড় খেকোদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

জৈন্তাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট দিন রাত অভিযান পরিচালনা করছেন৷

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সিলেটের ছয় উপজেলায় পাহাড় টিলা কাটা রোধে ২০১১ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।  সিলেট সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর জন্য ৯৭৫০/১১ একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ মার্চ পাহাড় টিলা কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত রায় দেয়। এ আইনের মাধ্যমে অপরাধ দমনে জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/সাব্বির/পল্লব-১৭