রাস্তার পাশে সারি সারি দোকানপাট। বছরের পর বছর ধরে চলছে ব্যবসা। সড়ক আর খালের জায়গা উদ্ধার করে যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল সেটা কেউ জানতোই না। দুই পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে প্রশস্ত করাও যাচ্ছিল না রাস্তা। ফলে হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজারে আসা দর্শণার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হত। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক থেকে মাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় যানজট লেগেই থাকতো। সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর সড়কটির উপর নজর পড়ে কর্তৃপক্ষের। ৬ মাস আগে নোটিশ দেওয়া হয় দখলদারদের। কিন্তু স্বেচ্ছায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেননি কেউ। অবশেষে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বোলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে প্রশস্ত করা হয়েছে রাস্তা।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানায়, হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজারে প্রতিদিন হাজারো দর্শণার্থী আসেন। বৃহস্পতি থেকে শনিবার এই তিনদিন কয়েক হাজার ভক্তদের সমাগম ঘটে এই মাজারে। বাস, মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন নিয়ে তারা মাজারে আসেন। কিন্তু সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক থেকে হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি অপ্রশস্ত হওয়ায় অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হতো। সরু রাস্তা দিয়ে এক সাথে দুটি যানবাহন চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এতোদিন মাজার এলাকা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তভর্‚ক্ত থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। রাস্তার উভয় পাশে নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলোও উচ্ছেদে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত বছর মাজার এলাকা সিটি করপোরেশনের অন্তভর্‚ক্ত হলে রাস্তা প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা নেয় সিসিক। করপোরেশনের সার্ভেয়াররা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান রাস্তার পূর্ব পাশের ছড়া ও সড়কের জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা দোকানপাট নির্মাণ করে আছেন। দখলদাররা বছরের পর বছর সরকারি জায়গা দখল করে থাকলেও সেদিকে কারোই নজর ছিল না। অবশেষে সিসিকের পক্ষ থেকে জরিপ করে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। স্থাপনাগুলো স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিতে প্রায় ৬ মাস আগে সিসিক কর্তৃপক্ষ নোটিশও দেয়। কিন্তু এই নোটিশ আমলে নেননি কোন ব্যবসায়ী। এমতাবস্থায় গত সোমবার শাহপরাণ এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আগাম মাইকিং করা হয়। কিন্তু তারপরও টনক নড়েনি দখলদারদের। শেষ পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বোলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামে সিটি করপোরেশন। সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান খানের নেতৃত্বে চলে অভিযান। অভিযানকালে শতাধিক স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করা হয়।
সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান জানান, রাস্তা ও খালের জায়গা দখল করে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন তাদেরকে ৬ মাস আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিতও করা হয়। চ‚ড়ান্ত নোটিশ হিসেবে মাইকিংও করা হয়। কিন্তু দখলদাররা তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এখন রাস্তা প্রশস্তকরণ ও পার্শ্ববর্তী খালকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ শুরু করবে সিসিক।
এদিকে, উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অনেকে অভিযানে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন। ব্যবসায়ীদের কারো কারো অভিযোগ, অভিযানে প্রভাবশালী অনেকের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। আবার কারো অভিযোগ নিজেদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সিটি করপোরেশন অবৈধভাবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দিয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ/