প্রকাশিত: ০২ মে, ২০২৩ ২৩:৫৮ (শুক্রবার)
কিনব্রিজের উপর দুই নবজাতকের কান্না, থমকে দাঁড়ান পথচারীরা

যে সময়ে চার দেওয়ালের ভিতরে নরম তুলতুলে বিছানায় মায়ের ওম-বুকে লেপ্টে থাকার কথা, সেই সময়ে পিচঢালা তপ্ত রাস্তার উপরে মলিন এক টুকরো কাপড়ের উপর এক বালিশে শুয়ে আছে দুই নবজাতক।

মাথার উপরে বৈশাখের গনগনে সূর্য। পাশে জীর্ণ বসনে বসে আছেন ৩০-৩২ বছর বয়েসি মা। পাশে আরও দুই শিশু খেলছে। তারাও জমজ। তাদের বয়স বয়স দুই-আড়াই বছর।

দৃশ্যটি সিলেটের কিনব্রিজের উপরে গত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু জন্মের পরই দুই শিশুসন্তান নিয়ে রাস্তায় কেন এক মা? প্রশ্ন করে জানা গেলো হৃদয় আহত করা এক গল্প।

ওই নারীর নাম আয়েশা বেগম। বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকায়। মা-বাবা নেই। বিয়ে হয়েছিলো সিলেটের গোয়ালাবাজার এলাকার একজনের সঙ্গে। স্বামীর নাম বলতে নারাজ আয়েশা।

কথাচ্ছলে জানালেন- গর্ভ অবস্থায় কয়েক মাস আগে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আরেক বিয়ে করেছেন অন্য কোথাও গিয়ে। গত ২০ রমজান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জমজ সন্তানের জন্ম দেন আয়েশা। এর মধ্যে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে। কিন্তু জমজ শিশুসহ তিনি যাবেন কোথায়? নেই আশ্রয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দক্ষিণ সুরমার স্টেশন রোড এলাকার একটি কলোনিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। আর দিনের বেলা সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন কিনব্রিজের উপরে, করে ভিক্ষাবৃত্তি।

আয়েশা জানালেন- তার মোট ৫ সন্তান। এই চারজন ছাড়া ৮ বছরের এক মেয়েকে ঘরে রেখে এসেছেন। এদেরকে তার গলায় বেঁধে দিয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন স্বামী। তাই তার ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া উপায় নেই। শিশুদের এভাবে শুইয়ে রাখলে মানুষ টাকা বেশি দেয় বলে তার বক্তব্য।

আয়েশাদের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়- কিনব্রিজের পথচারীরা এই দুই নবজাতকের এমন করুণ অবস্থা দেখে আফসোস করছেন আর সাধ্যমতো টাকা-পয়সা দিয়ে যাচ্ছেন সামনে রাখা পাত্রে। আয়েশা জানান- প্রতিদিন তার ৭০০-৮০০ টাকা হয়ে যায় এভাবে।

কাউকে বাচ্চা দত্তক দেবেন কি না এমন প্রশ্ন করলে আয়েশার সাফ জবাব- ‘আমার সন্তানদের আমি কারো কাছে দিবো না। এগুলো আমার টাকা রুজির মেশিন।’

জানা যায়, অনেকেই এই শিশু দুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আয়েশা এতে অসম্মতি প্রকাশ করেন।

তবে মানবতার তাড়নায় অনেককেই এই নবজাতকদের জন্য নতুন কাপড়, কাঁথা-বালিশ ও মশারি নিয়ে আসতে দেখা যায়। এছাড়াও অনেকেই দিয়ে যাচ্ছেন ফল-বিস্কুট।

আয়েশা জানান- নবজাতক দুই শিশুর মধ্যে একজন মোটামুটি সুস্থ। তবে অন্যজন অসুস্থ, হাড়জিরজিরে অবস্থা। কিন্তু নিত্যদিন ভিক্ষা পাওয়া সব টাকা ৬ জনের সংসারে ডাল-ভাতের জোগাড় করতেই খরচ হয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য আর কোনো টাকা অবশিষ্ট থাকে না।

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (কার্যক্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা) মোহাম্মদ রফিকুল হকের। তিনি মঙ্গলবার (২ মে) সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে বলেন- বিষয়টি এইমাত্র জানলাম। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় আছে। আমরা কালই (বুধবার) এ বিষয়ে খোঁজ নিবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

তিনি আরও বলেন- সরকার এমন শিশুদের জন্য অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছে। পথশিশু বা অভিভাবকহীন শিশুদের উন্নত ব্যবস্থাপনায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের। শিশুনিবাসে ১৮ বছর পর্যন্ত এমন শিশু থাকতে পারবে। ওখানে থাকা অবস্থায় প্রতিদিন তাদের মা তাদেরকে দেখতে যেতে পারবেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম