প্রকাশিত: ০৪ মে, ২০২৩ ১৩:৪৮ (শুক্রবার)
‘শুঁটকি নদীর বাঁধ’ আশ্রয়ন প্রকল্পটি এখন স্বনির্ভর গ্রাম

দু’পাশে সবুজ ধানক্ষেত নদী নালা খাল বিল আর আঁকাবাকা মেটোপথ। এরই মধ্যে সবুজ গাছ গাছালির ফাঁকে যেন উকি দিচ্ছে সারি সারি লাল টকটকে টিনের চালা। সারিবদ্ধভাবে দাড়ানো ঘরগুলো দেখলে চোঁখ আটকে যাবে যাবে যে কারো। হাওরের মনোরম পরিবেশ আর দূষণমুক্ত বাতাস কার না ভাল লাগে। এ রকমই একটি দৃশ্যের দেখা মিলে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ‘শুটকি নদীর বাঁধ’ আশ্রয়ন প্রকল্পে। 


হঠাৎ করে প্রকল্পটি দেখলে যেন মনে হবে এটা কোন স্বপ্নপূরি। মাত্র ক’দিন আগেও ছিল না যাদের মাথা গোঁজার ঠাই তারাই এখন বসবাস করছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ওই গ্রামে। শুধু তাই নয়, সরকারের দেয়া এমন সুযোগ সুবিধা পেয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাল্টে গেছে ওই প্রকল্পে বসবাস করা ১২৩টি পরিবারের জীবন জীবিকা। এক কথায় বলা যায় ‘শুটকি নদীর বাঁধ’ আশ্রয়ন প্রকল্পটি এখন একটি স্বনির্ভর গ্রাম।


আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন রাজিয়া খাতুন দম্পতি। কিছুদিন আগেও যাদের ছিল না সহায় সম্বল কোন কিছুই, তারাই এখন স্বপ্ন দেখছে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার। আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘরের সামনের উঠানেই চাষ করছেন বেগুণ, আলু, লাউ ও শিমসহ নানা ধরণের শাক সবজি। ফলনও হয়েছে ভালো। রাজিয়া খাতুন বলেন, আমাদের চাষ করা এসব শাক সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এখন বিক্রিও করছি। আর তা থেকে আমাদের ভালো আয়ও হচ্ছে। একই প্রকল্পের বাসিন্দা মোশাহিদ মিয়া ও মাকসুরা বেগম দম্পতি। স্বামী কাজ করেন বাহিরে আর মাকসুরা নিজ ঘরেই চালান একটি মুদি দোকান। যেই দোকানে প্রতিদিন অন্তত তার বেচা বিক্রি হয় হাজার খানেক টাকা। আশ্রয়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাই পাওয়ায় এখন ভালোই সংসার চলছে তাদের। মাসসুরা বেগম বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারব।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওর থেকে স্বামীর ধরে আনা মাছ, নিজের ক্ষেতের অলু, টমেটো, কাচামরিচ দিয়ে একপদ, আর লাউয়ের ডাটা ও শাক দিয়ে আরেক পদের রান্না বসিয়েছেন রাজবানু নামে এক নারী। আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসার পর থেকেই পাল্টে গেছে তাদের জীবনযুদ্ধের গল্পটা। শুধু তাই নয়, পালন করছেন গরু-ছাগল এবং হাস-মোরগও। ফলে স্বামী আর এক মেয়েকে নিয়ে রাজবানুর ছোট্ট পরিবারে এখন সুখের সীমা নেই। আলাপচারিতায় রাজবানু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ তিনি আমাদের এই সুযোগ করে দিয়েছেন। আমাদের মাথা গোাঁজার ঠাইটুকু করে দিয়েছেন। যে কারণে আমরা এখন সন্তানাদিদের নিয়ে বেশ সুখেই আছি। শুধু রাজিয়া-মাকসুরা-রাজবানুরাই নয়, এ প্রকল্পের প্রত্যেকটি পরিবারের গল্পই এখন একই। হাসিখুশি আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাটছে তাদের সুখের সংসার। এক সময়ে অবহেলিত মানুষগুলোই এখন এখন সমৃদ্ধির পথে।


এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের ভেতরেই শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিগগিরই একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে যেহেতু কোন ব্যবস্থা নেই তাই ব্রাকের সাথে আলোচান করে একটি প্রি-প্রাইমারি স্কুল চালু করার ব্যবস্থা করেছি।


হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে কাজ করা হচ্ছে। যাতে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বি হতে পারে। তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী জুন মাসের মধ্যে আমাদের চেষ্ঠা থাকবে হবিগঞ্জ জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করার।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/জাকারিয়া/ইআ-০২