বৃষ্টিস্নাত দুপুর আজ গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। বসন্ত পেরিয়ে গেছে আমাদের ব্যস্ত জীবন ঘুরে। জীবনের রঙ কি এবার কিছু মলিন হয়ে এলো? না, আমাদের চেনা পথগুলো এখন কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়া আর সোনালুর রঙে সেজেছে।
বসন্তের শেষেই ফুলেফুলে সেজে উঠে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়া। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া তার রূপে আমাদের সবাইকে বিমোহিত করে রাখে। তার লাল আভায় জগত রাঙিয়ে দেয়। দূর থেকে দেখে মনে হয় কৃষ্ণচূড়া নয় এ যেন মায়াবী কোন অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে এলে মনে হয় জীবনান্দের বনলতা সেন। তার ছায়ায়, রঙে দুদণ্ড শান্তির পরশ পেতে মন যেন আর মানেনা। পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ার দেখা পেলে সারা জীবন যাযাবর পথিক হয়ে থাকতেও যেন কোন আপত্তি নেই। নগর জীবনে প্রশান্তি এনে দেয়া ফুলগুলো তপ্ত দুপুরে শীতল হাওয়ার মত। চোখে পড়লেই হৃদয় যেন ঠাণ্ডা হিম হয়ে আসে।
মনে পড়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সেই কৃষ্ণচূড়া নিয়ে লেখা কবিতা, এই যে কুসুম শিরোপরে, পরেছি যতনে, মম শ্যাম-চূড়া-রূপ ধরে এ ফুল রতনে! বসুধা নিজ কুন্তলে পরেছিল কুতূহলে এ উজ্জ্বল মণি, রাগে তারে গালি দিয়া, লয়েছি আমি কাড়িয়া—মোর কৃষ্ণ-চূড়া কেনে পরিবে ধরণী?
শহুরে উষ্ণতার মাঝে ছাপিয়ে যাওয়া আকাশের দর্পন যেন কৃষ্ণচূড়ার গন্তব্য। আগুনরঙা অনুভুতির প্রাক্কালে গুলমোহরের সতেজতা মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয় খেয়ালে কিংবা বেখেয়ালে। রক্তিম সিংহাসনে ছড়িয়ে দেওয়া সৌন্দর্যের দিকে তাকালে নাগরিক ক্লান্তি সাময়িক অবকাশ পায়, অনুভূতির রাঙা হাওয়ায়।
লেখক: সাংবাদিক।