প্রকাশিত: ০৭ মে, ২০২৩ ১৯:৪০ (শনিবার)
দাখিল পরীক্ষার্থী বহিষ্কার, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভুলে ছাত্রের শিক্ষাজীবন হুমকিতে

(প্রতীকী ছবি)

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে গড়মিল থাকায় রুহুল আমিন নামে এক দাখিল পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া নগদ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে রুহুল আমিনকে। 

তবে পরবর্তীতে জানা গেছে- মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ভুলে অযাচিত এ শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে এই দাখিল পরীক্ষার্থীকে। ফলে তার শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখে। 

রোববার (৭ মে) পরীক্ষার চতুর্থ দিনে উপজেলার কলাউরা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ। 

বহিষ্কারকৃত রুহুল আমিন উপজেলার ইসলামপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র। সে স্থানীয় বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

জানা যায়, রুহুল আমিন মাস তিনেক আগে ধার্য্যকৃত তিন হাজার টাকা ফি আদায় করে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। যথারীতি চারটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশও নেয় সে। রোববার গণিত পরীক্ষার ২ঘন্টা অতিবাহিত হলে কেন্দ্রসচিব মাওলানা কালিম উল্লাহ খাতাপত্রসহ রুহুল আমিনকে অফিসে ডেকে পাঠান। পরে তার রোল দোয়ারাবাজার নং-২৯৩৯৬১ এর রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ সকল কাগজপত্রে গড়মিল দেখিয়ে কেন্দ্রসচিব স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

পরে রুহুল আমিন জানতে পারেন,  মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তার বদলে ভুল করে দু'বছর আগে ঝরে পড়া রুহুল আমিন নামের সাবেক ছাত্রের নাম-ঠিকানা দিয়ে পরীক্ষার্থী আমিনের ফরম পূরণ করেছিলেন।

ঘটনার পর পুরো বিষয় জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে রুহুল আমিন। সে এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলে- সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ১০ বছর ধরে অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি দিনরাত পরিশ্রমও করে সে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ভুলের কারণে আজ তার শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে সে। জরিমানার ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা তার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। 

মানসিকভাবে ভেঙে পড়া রুহুল আমিন এসময় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিচার চায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদরাসার সুপার এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, রুহুল আমিন নামের দুই ছাত্র থাকায় অনিচ্ছাকৃত ভুল করে বিদেশে থাকা রুহুল আমিনের ফরম পূরণ করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও প্রবেশপত্র সংশোধন করতে না পেরে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সহানুভূতিতে তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। 

‘অনিচ্ছাকৃত’ এ ভুলের জন্য এসময় ক্ষমা চান মাদরাসা সুপার।

মাদারাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান জসিম আহমেদ চৌধুরী রানা বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি।  মাদরাসার সুপার ও অফিস সহায়কের ভুলের কারণে একটা ছাত্রের জীবন নষ্ট হোক, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব ইনশা আল্লাহ। 

জানত চাইলে কেন্দ্রসচিব মাওলানা কালিম উল্লাহ বলেন, প্রবেশপ্রত্র ও রেজিস্টেশন কার্ডের গড়মিল থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে চারটি পরীক্ষায় কীভাবে অংশ নিল তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। 

ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে বলে জানান কেন্দ্রসচিব মাওলানা কালিম উল্লাহ। 

এ ব্যাপারে ইউএনও আরিফ মোর্শেদ মিশু বলেন, একদিকে ওই পরীক্ষার্থীর ছবি ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে গড়মিল, অপরদিকে অন্যের বদলে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নগদ ২০ হাজার টাকা জরিমানাসহ তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / তাজুল / ডি.আর