প্রকাশিত: ০৯ মে, ২০২৩ ১৪:১৮ (বৃহস্পতিবার)
সিলেটে যেভাবে গ্রেফতার হলো ‘ভয়ঙ্কর’ চার জঙ্গী

সিলেটের এয়ারপোর্টের বড়শলা এলাকা থেকে রাতভর অভিযান চালিয়ে চার ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গ্রেফতারকৃত সবাই জঙ্গি নতুন সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য

 

সোমবার রাতভর অভিযান শেষে তাদেরকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার (সিনিঃ এএসপি) আফসান-আল-আলম।

 

গ্রেফতারকৃতরা হলো- ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’  অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, মো. আবু জাফর, মো. আক্তার কাজী, সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা। এরমধ্যে মায়মুনের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়। আর আবু জাফর, আক্তার কাজী ও রাজ্জাক মোল্লার বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ২ লাখ টাকাসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি।

 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে র‍্যাব-৯ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

 

মঈন জানান, আব্দুল্লাহ মায়মুন অভিনব কৌশলের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তিনি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাথে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সেতুবন্ধন কাজ করেন।

তিনি জানান, ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণের নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।তখন র‍্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‍্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র‍্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন 'কেএনএফ' এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

 

খন্দকার আল মঈন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন 'কেএনএফ' এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আমরা আনি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদ, দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব।

 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ সিলেট এলাকায় অবস্থান করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‍্যাব-৯ এর যৌথ অভিযানে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার বড়শালা বাজার এলাকা হতে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় নগদ ২ লক্ষ টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি।

 

‘গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন ২০১৩ সালে সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। সে আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় প্রধান ছিল। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতা চাকুরিচ্যুত মেজর জিয়ার সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিলো। ২০১৯ সালে বগুড়ার একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় সে গ্রেফতার হয় এবং ১ বছরের অধিক কারাভোগ করে ২০২০ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্তি পায়।’ যোগ করেন এই কর্মকর্তা। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ মাহি