প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০২৩ ১৬:৩৮ (শনিবার)
গোলাপগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে নাভিশ্বাস ক্রেতাদের

গোলাপগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে যেন লেগেছে আগুন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের মাঝে। অপরদিকে ভোগ্যপণ্যে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছে মতো মূল্য বৃদ্ধিতে অসহায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। 

 

কাঁচা বাজার, মাছ বাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান সবখানেই এক দশা। বিশেষ করে তেল পেঁয়াজ ও রান্নার বিভিন্ন উপকরণে মূল্য বেড়েছে ব্যপক হারে। যা মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিদিনের রোজগারকৃত অর্থের বাইরে।

 

নিত্যপণ্যের বাজারে ভোজ্য তেল, চিনি, মাছ-মাংস, আটা-ময়দার, সবজি সহ সব ধরনের খাদ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কোনো কোনো পণ্যের (যেমন চিনি) দাম বাড়িয়ে সরকারিভাবে যে দর নির্ধারণ করা হচ্ছে, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে। প্রায় বেশিরভাগ দোকানে নেই মূল্য তালিকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। 

 

সাধারণত পণ্যের সংকট থাকলে দাম বাড়ে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা জনমনে ক্ষোভ ও হতাশা সঞ্চার করেছে। কিন্তু দেশে এখন খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে, এমনকি আমদানিকৃত যে পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, স্থানীয় বাজারগুলোতে সে পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে হয়ে পড়ে দিশেহারা। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। 

 

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে সরেজমিনে পৌর সদরের ভিতর বাজার ও ঢাকাদক্ষিণ বাজারে গেলে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরেই খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। অথচ এতদিন সরকার নির্ধারিত পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ছিল ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ছিল ১০৯ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ টাকা পকেটে ঢুকাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

 

বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে দেশে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। কিন্তু গত ৪ মাস ধরে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে করানো হয়নি। বরং আরও বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। সয়াবিন তেল এখন লিটারে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

 

এদিকে বাজারে সরবারহে ঘাটতির কারণেই আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছেন। 

 

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ভারতীয় পেয়াঁজ (এলসি) আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেয়াঁজের দাম বেড়েছে। রমজানের আগে থেকেই অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। 

 

কয়েকদিনের ব্যবধানে আরও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আর ডিমের হালি হয়েছে ৫০ টাকা। এখানেও চলছে ইচ্ছেমতো লুটপাট। 

 

কোরবানির বাকি এখনও প্রায় ২ মাস। এরমধ্যেই অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এই অবস্থায় নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের জীবনও হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। 

 

স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা সিলেটের কালিঘাট থেকে পন্য কিনে আনতে হয়। সেখানে থেকে চড়া দামে কেনার কারণে দাম বাড়িয়ে বিক্রী করতে হচ্ছে।

 

বাজার করতে আসা এক মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীর স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, স্বামী বিদেশ থেকে মাসে যে টাকা পাঠান তাতে মাসিক খরচেই চলে যায়। সারা মাস খুব কষ্ট করেই পোষিয়ে নিতে হয়। দিন দিন যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে আগামীতে কিভাবে দিনাতিপাত করবেন তা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি।

 

কলিম উদ্দিন নামের আরেক ক্রেতা ৩ মেয়ে ও মা ও স্ত্রী নিয়ে মোট ৬ জনের সংসার তাঁর। পেশায় দিনমজুর। ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, ‘সারা দিনে হারভাঙ্গা পরিশ্রম করে যা পাই-চাল আর মশলাপাতি কিনেই তা ফুরিয়ে যায়। এই রোজগার দিয়ে সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন মাছ কিনে খেতে পারিনা। তার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।’

 

বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে একটি আইন করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে-চাল, পেঁয়াজ, লবণ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুত করলে সংশ্লিষ্ট মজুতদারের বিচার হবে বিশেষ খাদ্য আদালতে। কাজেই যারা অবৈধভাবে পণ্য মজুত করবে, আইনের দৃষ্টিতে তারা অপরাধী। তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে এখনই অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন এবং বিষয়টি জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় এ ব্যাপারে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। 

 

এমতাবস্থায় যেসব অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার জন্য সময় ও সুযোগ বুঝে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, বাজারে প্রকৃত তদারকির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী সাধারণ ভোক্তাদের।

 

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান সিলেটভিউকে বলেন, আমরা সাধারণ ক্রেতাদের অবস্থা বুঝতে পারছি। ইতিমধ্যেই গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দদেরকে বাজার তদারকি করতে বলা হয়েছে এবং স্যানিটারী ইন্সপেক্টকদের দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে খুব শিঘ্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম /হিমেল/নাজাত