প্রকাশিত: ২৪ জুলাই, ২০২৪ ১৭:৪৫ (রবিবার)
তালিকা হচ্ছে গা-ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে না পারাকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে উঠতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের সংকট মুহূর্তে গা ঢাকা দেওয়া নেতা এমনকি দলের এমপিসহ প্রভাবশালী যাঁরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতা, ঢাকার দলীয় এমপিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা তিনি জানিয়ে দেন মহানগরী ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, ওয়াকিল উদ্দিন এমপি, সোলায়মান সেলিম এমপি, মশিউর রহমান মোল্লা সজল এমপি, ড. আওলাদ হোসেন এমপি, যুব মহিলা লীগ সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজী, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর


রহমান বাবু, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাইনুদ্দিন রানা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বৈঠকসূত্র জানান, বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত কয়েক দিন ক্রাইসিস মুহূর্তে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দেখা গেছে। এ সমন্বয়হীনতা কাটাতে হবে। নেত্রী সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। যাঁরা দায়িত্বশীল পদে থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ বিদেশ গিয়েছেন তাঁদের তালিকা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেন কাদের। ঢাকা মহানগরী উত্তর-দক্ষিণের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরী ওয়ার্ড-থানার দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু নেতারা কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা এক হতে পারেননি দীর্ঘদিন। কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, গাবতলী এলাকায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এসব এলাকার কাউন্সিলররাও বিশেষ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, গাবতলী এলাকায় বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কারফিউ চলাকালে এসব জায়গায় রাস্তায় সমাবেশ না করে অলিগলিতে সতর্ক অবস্থান নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে কাদের জানান, যেসব জায়গায় বেশি তা-ব চালানো হয়েছে, সেসব জায়গার দলীয় সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, থানা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় আজ দুপুর আড়াইটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা-৪, ঢাকা-৫ আসনের এমপি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বৈঠকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার সমালোচনা করা হয়। বিভিন্ন জেলায় কমিটি না থাকায় বিরক্তি প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে গত কয়েক দিনে আন্দোলনে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ও আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তালিকা করার নির্দেশনা প্রদান করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা শক্ত ভূমিকা রাখতে ও বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে না পারায় ক্ষুব্ধ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে দলীয় সভানেত্রীর কঠোর বার্তাই দলটির সাধারণ সম্পাদক আমাদের জানিয়েছেন। তারা বলেন, শুধু ওবায়দুল কাদেরই কথা বলেছেন। অন্য কোনো নেতা কথা বলেননি।

 

সিলেটিভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/মিআচৌ