প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট, ২০২৪ ২৩:৫৫ (সোমবার)
স্কুল থেকে পদত্যাগ করানোর পর শিক্ষক ও যুবলীগ নেতাকে ব্যাপক মারধর

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব সায়পুর বেসরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. এমাদ হোসাইনকে জোর করে স্কুল থেকে পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তাকে শারীরিকভাবে বেদড়ক মারধর করা হয়েছে।  

অভিযোগ উঠেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা পূর্ব সায়পুর বিদ্যালয়ে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। 

এদিকে ওই শিক্ষক ও যুবলীগ নেতাকে স্কুল থেকে পদত্যাগ ও মারধর করেও ক্ষান্ত হয়নি অভিযুক্তরা। গত ৭ আগস্ট তার বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমনকি তার বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

হামলা-মারধরের পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উল্টো দুটি মামলা ঠুকেও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সুস্থ হলেও হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই যুবলীগ নেতা। এছাড়া তার পরিবারও চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এই ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়েছে ওই শিক্ষক ও যুবলীগ নেতার পরিবার। এদিকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বড়লেখা থানা পুলিশ আত্মগোপনে রয়েছে। যার কারণে এই বিষয়ে আইনী কোনো সহায়তা পায়নি ওই যুবলীগ নেতার পরিবার। 

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও যুবলীগ নেতার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের মো. আব্দুছ ছালামের ছেলে মো. এমাদ হোসাইন উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব সায়পুর বেসরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আদর্শিক দিক থেকে প্রায়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতেন। তাদের নিয়ে সমালোচনা করতেন। এসব কারণে জামায়াত-শিবিরের সাথে এমাদের রাজনৈতিক বিরোধ তৈরি হয়। 

এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে  সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো বড়লেখায় স্থানীয় এমপি ও সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ওইদিন এমাদ হোসাইন নিজের কর্মস্থল অর্থাৎ পূর্ব সায়পুর বেসরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ে ছিলেন। এসময় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কয়েক শতাধিক অস্ত্রধারী নেতাকর্মী বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে ঘেরাও করে। পরে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জোর করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। এসময় প্রাণের ভয়ে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তখন এমাদকে সবার সামনে ‘স্বৈরাচারের দোষর, ফ্যাসিস্টের সহযোগী এবং আওয়ামীলীগের দালাল’ বলে আখ্যায়িত করে শারীরিকভাবে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে এমাদের পরিবার গোপনে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে দুইদিন চিকিৎসা গ্রহণ করে তিনি কিছুটা সুস্থ হন। 

এদিকে গত ৭ আগস্ট সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে আক্রমণ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। একইদিন রাতে সন্ত্রাসীরা তার বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে এমাদ হাসপাতাল থেকে ফিরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন। বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা একটি মামলায় তাকে ৩নং আসামী এবং বড়লেখা থানায় অপর  অপর মামলায় হত্যা চেষ্টা মামলা ৫নং আসামী করা হয়েছে। 

শিক্ষক ও যুবলীগ নেতা এমাদের বাবা মো. আব্দুছ ছালাম কান্নাজড়িতকণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আমার ছেলেকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পদত্যাগ করিয়েছে। পরে আমার ছেলেকে তারা মারধর করেছে। আমার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। আগুন ধরিয়ে আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছে। এখন আমার ছেলের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়েছে। ভয়ে আমার বাড়িতে থাকতে পারছি না। অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। আমার ছেলেও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসবের বিচার আমি কার কাছে দিব। কাকে বলব। আমি এই ঘটনায় ন্যায় বিচার চাই। 

সরকার পতনের পর বড়লেখা থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা পলাতক রয়েছে। যার কারণে পুলিশের ফোনে কল করা হলেও তারা কল না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক