অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। এই প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই বৈঠকে তারা সরকারের মেয়াদ কিংবা নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ তা কায়েম করতে যত দিন লাগে সেই সময়টুকু তারা দিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপি নেতারা। বৈঠক শেষে ৪টা ৫০ মিনিটে যমুনা থেকে বের হয়ে আসেন তারা। পরে সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
ড. ইউনূসের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে নির্দিষ্ট একটা সময় লাগবে। আমরা তাদের সেই সময়টা অবশ্যই দিয়েছি। আর আমরা তাদের সব বিষয়ে সমর্থন দিয়েছি।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, বর্তমান দেশে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িকতায় ধোয়া তোলা হচ্ছে, এগুলোতে জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এবং পূর্বের মতোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অক্ষুণ রেখে, জনগণের নিরাপত্তাকে অক্ষুণ রেখে তারা যেন এই সরকারকে সহযোগিতা করে। আমারও পুরোপুরিভাবে তাদের সেভাবে সহযোগিতা করছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের জনগণের যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য আবার চক্রান্ত শুরু করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন আমরা মনে করি, এই সরকারকে সহায়তা করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের একমাত্র কর্তব্য। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মহলটি, যারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে হরণ করে নিয়েছিল, তারা আবার বাইরে থেকে, বিদেশ থেকে, এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে অবস্থা নিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশের জনগণের যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য আবার চক্রান্ত শুরু করেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, এই বাংলাদেশের ওপরে অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে- একটা গল্প পাতানো হয়েছে, সেই গল্পটা একেবারে পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যমূলক এবং বাংলাদেশকে ম্যালাইন করা, এই সরকার ম্যালাইন করা এবং ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার আরও একটি চক্রান্ত। খুব দুর্ভাগ্যজনক এত হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের পর সেই দলটি আবারও বিভিন্ন রকম কথা বলছে। যা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি, এই সরকারের এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারকে সংলাপ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে। কিন্তু কোনো হত্যাকারীর সঙ্গে না। যারা ছাত্র, শিশু, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। মূলত গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণবিরোধী যে ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে এদেশে মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে জনগণকে তার ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যে অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে ফ্যাসিস্ট রোল কায়েম করেছিল, ছাত্র, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের ফলে তা থেকে মুক্তি পেয়ে আজকে একটা মুক্ত পরিবেশে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই প্রথম আজকে তারা আমাদের সঙ্গে বসেছেন। আমরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী কী করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের মতামত দিয়েছি। তারাও কী কী করতে যাচ্ছেন তা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।’
বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও বেগম সেলিমা রহমান ছিলেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-৬৫১৩