পত্র-পত্রিকায় লিখার অভ্যাস ১৯৮৬ সাল থেকে। রেডিও টক্ও আরম্ভ করেছি ঐ সাল থেকেই। সব মিলিয়ে লেখা হয়ে গেছে প্রায় ২০০ এর মত কলাম। রেডিও টক্ হয়েছে প্রায় ১০০ টি।
ইরেজি ‘প্রফেসর’ শব্দের বাংলা এক অর্থ হচ্ছে ‘পাবলিক টিচার’। তাই, বিভিন্ন পাবলিক মিটিং-এ শিক্ষামূলক বক্তব্য দিয়েছি প্রায় আরও ২০০ এর অধিক। অনিচ্ছা সত্বেও সম্মানজনক ক্রেষ্ট উপহার পেয়েছি প্রায় উল্লেখিত সংখ্যকই।
ব্র্যাক, বাংলাদেশ কি ভাবে যেন এ সব খবর পেয়েছে। ২০১৬ সালে তারা আমি এই ছোট্ট মানুষটিকে সম্বর্ধনা দিয়ে উপাধি ও সার্টিফিকেট দিয়েছে “শিক্ষা-অগ্রদূত’। দেশের রাজনীতি বিষয়ে লিখেছি অনেক নিবন্ধ, লিখেছি স্বদেশের উন্নয়নের বিষয়েও অনেক। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাহ-বিশ^বিদ্যালয় নিয়েও লিখেছি কম নয়। ছাত্র-রাজনীতি নিয়েও লিখেছি। ফোন পেতাম হাজারে হজার। মনে হয় কিছু কিছু কাজও হয়েছে। তবে অবশ্যই আশানুরূপ নয়। কাজ যদি বেশি হত, তবে দেখতে পেতাম এবং শুনাতমও।
করোনা - ’১৯, নিপা ভাইরাস, ইত্যাদি সঙ্ক্রামক রোগের উপর ঐ সময়েই পর পর অনেক নিবন্ধ লিখেছি। আর দেশে-বিদেশে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে গভীর গবেষনামূলক দু’টো কলাম অনেক কষ্ট করে লিখেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী বরাবর ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ভুলে ভরা ইংরেজি পাঠ্য বইয়ের উপর। তথাকথিত বুদ্ধিজীবি(?)দের লিখা ‘বানর থেকে মানুষের উৎপত্তি’(!) এ বিষয়েও লিখেছি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বা কারো কাছ থেকে কোন ফীড-ব্যাক না পাওয়ায় মর্মাহত হয়েছি। বুঝেছিঃ উনারা ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। তবুও, লিখার আগ্রহও অনেকটা কমে গিয়েছিল, যেটা একান্তই স¦াভাবিক।
আর শিক্ষামন্ত্রীর এগুলো পড়ার কি কোন সময় আছে? না, আদপেই না; কারণ নি¤œবর্গের মানুষের টাকায় কোন্ দিন কোন্ বিদেশে তিনি ভ্রমনে যাবেন, তা নিয়েই তো শিক্ষামন্ত্রী থাকতেন অধিক ব্যস্থ’। আবার টেক্ষ্ট-বুক বোর্ডের চেয়ারম্যানের ভূমিকা লেখায়ও ইংরেজি ভুল আছে, তো শুধরাবে কে, বা ভুল ধরার সাহসই বা কয়জনের আছে? অধিকন্তু, সময়ই বা কোথায়? আবার, বাচ্চা তো আমার নয়, অন্যের, তো ভুল ধরে আমার কি লাভ? রাজনীতিবিদদের বা ধনীদের বাচ্চারা তো পড়ে বিদেশে! তো আমি শুধু শুধু দুশমন বনব কোন দূঃখে?
নবাগত সরকারকে অনেক-অনেক আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সাথে সাথে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছিঃ জায়গামত বসাবেন জান্নেওয়ালা লোকদেরকে? দয়া করে স্বজনপ্রীতি দেখাবেন না। আমি বাস্তব উদাহরন দিচ্ছি। যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও শুধু মৌলভীবাজারি হওয়ার কারণে এক সাথে এবং পর পর দু’জন ভিসিকে সিলেটের শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে পাঠিয়ে বিশ^বিদ্যালয়টিকে সরকার ১২ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। শুধু মৌলভীবাজারি হওয়ায় কলেজের একজন ইংরেজির শিক্ষককে দু’টার্ম, একটি বোর্ডের চেয়ারম্যান বানিয়েছিল ঐ সরকার। ঐ চেয়ারম্যান সাহেব একদিন আমার অফিসে এসেছিলেন। আমি তখন ১৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান। আমার টেবিলে একটি আন্তর্জাতিক জার্নাল এমনিতেই রাখা ছিল। উনি সেটা হাতে নিয়ে পৃষ্টা উল্টাতে লাগলেন। একটি পৃষ্টায় উপরে “এ্যব্স্ট্রাক্ট” শব্দটি লিখা ছিল। উনিও ইংরেজির মানুষ। হঠাৎ পৃষ্টাটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে বলে উঠলেনঃ “এ্যব্স্ট্রাক্ট” জিনিষটা/মানেটা কী? মনে মনে ভাবলামঃ এজন্যই তো তুমি একজন “খয়রাতী” প্রফেসর, জীবনে তো একটা পাবলিকেশনও করো নি, একটি আর্টিক্যালও লিখনি, তাই ঐ শব্দটির অর্থও বুঝলে না! আহ্ কী লজ্জা! দুই বারের শিক্ষাবোর্ড-চেয়ারম্যন, স্বজনপ্রীতির আর কাকে বলে?
সরকারিভাবে একটি বিদেশে গিয়ে দীর্ঘ ৭ টি বছর ১৪ টি দেশের শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছি, আর, একমাত্র শাহজালাল বিশি^বিদ্যলয়েই তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এক টানা কাটিয়েছি প্রায় ২৯ টি বছর। এ দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাইতে আমার দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক অনেক বেশি মেধাবি। আর, আজ তাদের কি দুর্ভাগ্য? করতে হল কোটা-বিরোধী/বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলন, জীবন গেল প্রায় ৫০০/৬০০/হাজার জনের, আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে অগণিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জানলাম।
হায়রে মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বয়ং আমিও তো গিয়ছিলাম ভারতে আমার গ্রামের মাইনোরিটিদের সাথে। ছিলাম ভারতের ডাউকি বাজারে ৭ দিন, শুনেছি তাদের পানি-সম্পদমন্ত্রীর বক্তৃতাও। ছিলাম সম্পূর্ণ একা, বয়সও কম, তদুপরি সংগ্রামের শুরু মাত্র, সংগঠিত হওয়ার কোন সুযোগও পাই নি। ফিরে এসে লুকিয়েছিলাম ১৯৭১ সালের পর পর দুইটি অজো পাড়াগাঁয়ে।
আমি কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধকে আমার ক্যাপিটাল বানাতে পারতাম, যেহেতু আমার কলম কম ধারালো নয়। কিন্তু সজ্ঞানে আমি তা করি নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ না করেও অনেক বুদ্ধিজীবিই(?) বুদ্ধির ঠেলায় এই মুক্তিযুদ্ধকে আজীবন তাদের ক্যাপিটাল বানিয়েছেন। আর, অনেকবারের সরকারও ঠিক এ কাজটিই করেছে, যেন মুক্তিযুদ্ধটা ছিল তাদের বাপ-দাদার উত্তরাধিকার-সম্পত্তি! এখন নাতি-খুন্থি সবাই হইতে চায় এর বড় বড় ভাগিদার! নিষিদ্ধ যদি করতেই হয়, ফ্যাসিবাদিদেরকেই করুন।
বিচার করুন বৈধ রাজনৈতিক অনেক দলকে বাইরে রেখে ডামি প্রতিযোগি বানিয়ে ইলেক্শন করার, বিচার করুন নির্দিষ্ট মাঠে সভা করতে না দেয়ার, ঐটা কি কারো বাপ-দাদার মাঠ? বিচার করুন রাতের ভোটের, বিচার করুন পুলিশকে এ্যাবিউজ করার, বিচার করুন রোজ কোটি/দেড় কোটি টাকা চাঁদা তুলার, বিচার করুন নিজের দেশের রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে ভিন দেশি অবৈধ লাখ লাখ শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার - যেখানে নিজ দেশের কোটি কোটি সক্ষম মানুষ বেকার!
সম্মানিত মুক্তিযুদ্ধাদের ১০ পুরুষই যদি কোটায় চাকরী পায়, তাহলে মেধাবিরা যাবে কোথায়? তাই তো এত রক্ত ঝরানো পেটুয়া বাহিনীর মাধ্যমে। অথচ, মুক্তিযুদ্ধ করল ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-আলেম-উলামা আর আম জনতা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই মৌলানা ভাসানিই ছিলেন প্রথম আলম-নেতা যিনি বলেছিলেন, এই আজগুবি পাকিস্তান হতেই পারে না। সর্বপ্রথম তিনিই চেয়েছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু কেন যেন আমার দৃঢ় বিশ^াস, মৌলানা ভাসানি আজ বেঁচে থাকলে উনিই হয়ত হতেন ১ নম্বর রাজাকার।
মেধার অধিকার চাইতে গিয়ে পরশু জন্ম নেয়া ছেলে-মেয়েরা/শিক্ষার্থীরা হইল রাজাকার, আর একই দিনে জন্ম নেয়া প্রতিপক্ষরা হইল প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধা! আর সরকার হইল এই মুক্তিযুদ্ধাদের (?) গড-ফাদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সরকারের অধিকাংশ নেতাই ছিলেন জামাইর আদরে বিদেশে বিদেশে শ^শুরবাড়িতে। আর এরা এতই অকৃতজ্ঞ যে, সিলেটের কৃতি-সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, এম এ জি ওসমানীর নাম পর্যন্ত মুখে আনতে এরা লজ্জা পেত।
হে অন্তর্র্বর্তিকালীন সরকার, দয়া দেখিয়ে দয়ার পাত্র হবেন না, সিম্পেথি দেখিয়ে সিম্পেথির পাত্র হবেন না, গোখ্রা সাপ আরো একবার ফনা তুলতে পারলে, নিশ্চিৎ থাকুন, আপনাকেও খাবে।
হে আশার আলো নবাগত সরকার, আপনারা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সুপরিবর্তনের ব্যাপারে আত্ম-ওয়াদাবদ্ধ হবেন। আমার অভিজ্ঞতাঃ কুশিক্ষার চাইতে অশিক্ষা উত্তম, যদিও কোন অবস্থাতেই আমরা অশিক্ষাকে সমর্থন করব না। আর, দেশের মাদ্রাসা-শিক্ষার দিকে আশু নযর দিবেন, কারণ, ওগুলো কুসঙ্স্কারে নিমজ্জিত। দেশের সুশিক্ষিত উচ্চ ডিগ্রিওয়ালা মানুষগুলোকে আশ-পাশ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতি বানাবেন, রাজনৈতিক দাপট খাটিয়ে কোন সার্থপর-পা-চাটা-পিশাচকে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখ-ভালের দায়িত্ব দেবেন না। আমি পরিষ্কার বলছিঃ আমার উপজেলা সিলেটের গোয়ইনঘাটের ১০ নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ণানগন গ্রামের আশে-পাশে অন্ততঃ ১০ টি স্কুল-কলেজ-মাদ্রসাহ অছে, যেগুলোর সভাপতিরা রাজনৈতিক দাপটে সভাপতি বনে আছেন, অথচ তাদের পায়ে গুলি মারলেও কারো মুখ থেকে একটি ইংরেজি-আরবী শ^দও বেরুবে না, তবে তারাই চালাচ্ছে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো, যেখানে রয়েছেন মাস্টর্স ডিগ্রিওয়ালা এবং টাইটেল পাশ শিক্ষকবৃন্দ।
দুর্নীতির ব্যাপারে যীরো টোলারেন্স অবলম্বন করবেন। ইতিহাস কাউকে চিনে না, ছাড়েও না, সময় এলে ঠিকই সঠিক টান দেয়। মনে রাখতে হবে, সাগর যেমন শুকায় না, পাপ তেমন লুকায় না।
আর শুধু বি সি এস দিয়ে সচিব হওয়া যাবে না, এটা তো একটা বাছাই পরীক্ষা মাত্র, হাইয়ার ডিগ্রি অবশ্যই থাকতে হবে। আমার নিজের বি সি এস তো সেই ১৯৭৯ সালের, সাথে পিএইচডি তো আছেই। কিন্তু প্রফেসর হলাম বুড়ো বয়সে। পড়াশোনায় মগজ ঢুকালে দুর্নীতি কমে যাবে, এটা চরম সত্য। দুর্নীতি কমানোর এটা একটা মহৌষধ। আর সচিবরা হবেন আমিত্ব/আত্মম্বরিতা-বিহীন, ভদ্রতা/সৌজন্যতা হবে তাদের অলঙ্কার, তাদের দয়িত্ব হবেঃ “মেক্সিমাম পাবলিক সার্ভিস ইন মিনিমাম টাইম”। তারা হবেন প্রজাতন্ত্রের সেবক/চাকর, কারণ, তাদের পেশা হচ্ছে “চাক্রী”। সবাই বলেঃ পুলিশ খারাপ, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেঃ পুলিশকে সবাই ব্যবহার করে। কিন্তু সচিবালয়? ওটা হচ্ছে দুর্নীতির অন্ধকার আখড়া। কারণ, মন্ত্রীরা বদলান, কিন্তু সচিবরা থেকে যান। বড় জোর তাদের বদল হয় এক মন্ত্রনালয় থেকে অন্য মন্ত্রনালয়ে। এজন্যেই তারা বেপরওয়া হয়ে উঠেন। এ অবস্থার বিহিত একান্ত দরকার। প্রয়োজনে বিনা বেতনে ওএসডি করবেন।
কোন্ মিনিস্টার বা তাঁর সচিব বছরে কয়বার বিদেশ যেতে পারবেন, বিদেশ যাওয়ার কারণ বা প্রয়োজনীয় কাজ কী কী থাকবে, সহযাত্রী কয়জন হবেন, কয়দিন থাকবেন, ফিরে এসে ০১ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফলের/অর্জনের/পাওয়া না পাওয়ার কম্পোজ্ড্ বাউÐ অরিজিনাল (কপি) সহ মেট ৮ কপি/সেট দাখিল করবেন। “সফল আলোচনা হয়েছে”- এটা একটা ভাওতাবাজি। জবাবদিহিতা অশ্যই থাকতে হবে, সচবিদেরকে গবেষণা করে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হবে, পাবলিকেশন্স থাকতে হবে, আন্তর্জাকি মান-সম্পন্ন জার্নালে কমপক্ষে ৮ টি। পাবলিকেশন্স ছাড়া সচিব হতে পারবেন না - এ আইন পারলামেন্টে পাশকৃত হতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে জানা যাচ্ছেঃ দেশের বিভিন্ন থানায় এবং অনেক খেলনেওয়ালা সদ্য-সাবেক মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ হচ্ছে। আমার মনে হয়, এগুলোতে কোন বিশ^বিদ্যালয়ের কোন মেধাাবি ও নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীরা জড়িত থাকতে পারে না, কারণ, তাদের যে এক দফা দাবি, তা পুরণ হয়ে গেছে। তারা উল্লাস করতে পারে, তবে তারা বিগত কয়েক দিনের খাওয়া-নিদ্রাহীন শারিরীক অবস্থায় এগুলোতে আর আগাবে না। তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও অঙ্গিকার শোনেছে, সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কের ভাষণ ও অঙ্গিকার শোনেছে। এখন তাদের ঘরে ফেরার পালা, আর অধ্যয়নে মনযোগি হওয়ার সময়।
তাহলে এ মুহুর্তে ঐ সমস্ত দুষ্কর্ম করছে কারা? নিশ্চয়ই তারা হাসিনার মাস্তান-পাটির দুষ্কৃতিকারিরা। তারা তো আর দেশত্যাগ করে নি। এ ছাড়া আরও আছে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের আদু ভাইয়েরা, যারা ছাত্র পরিচয়ে এখনো ক্যাম্পস ছাড়ে নি। এর উপরে আছে বুভুক্ষু অসহায় মানুষজন, যারা এ দুর্দিনে খেতে পাচ্ছিল না। তারা সুযোগ পেয়ে লুটতরাজ করবেই।
শুনেছি, অনেক উপজিলা পর্যায়ের থানায়ও ভাংচুর ও লুটতরাজ হয়েছে। হাসিনার রেখে যাওয়া সন্ত্রাসিরাই এগুলো করছে। এ আন্দোলনে শুধু ছাত্র নয়, শরীক হয়েছেন তাদের অভিভাবকবৃন্দও, শরীক হয়েছেন আম জনতাও, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দও, এমন কি, স্কুলের ছোট ছোট অবুঝ বাচ্চারাও।
আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা! শুধু মুখে এটা বলা তো ডাল-ভাত, যেমনটা হয়েছে ‘নারী-নির্যাতনের’ ব্যাপারটি। নারি যতই দোষী হউক,ওটাও পুরুষ-নির্যাতন হবে না, হবে নারি-নির্যাতন। পানি ঘোলা করার জন্য, উদাহরন-স্বরূপ, সংখ্যালঘুরা নিজেরাই নিজেদের বাঁশ-বেতের ঘর খালি করে নিজেরাই ওটাতেই আগুন লাগিয়ে দিল, অথবা সকল গরু ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই গোয়াল ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল, বা খড়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে কয়েকজন সংখ্যালঘু নামে-সাংবাদিককে ডেকে এনে, অথবা যারা হয়তো আগে থেকেই রেডি ছিল যে, অমুক সময় যেতে হবে, ছবি উঠিয়ে নিয়ে ভাইরাল করে দিল যে দেখ, বাংলাদেশে কি ভাবে সংখ্যলঘু নির্যাতন চলছে। অথবা, একই ঘরের আগুনের ছবি পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ, এই কোন্, ঐ কোন্ থেকে তুলে সর্ব দুনিয়ায় ভাইরাল করে দিল, দেখ দেখ, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের কী মর্মান্তিক অবস্থা! আর প্রযুক্তির এ যুগে আরো কত টেকনিক-ই না প্রয়োগ করা যায়। আর, চোখে বাস্তব দেখে দেশ-বিদেশের মানুষ তো বিশ^াস করবেই।
কিন্তু স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়-মাদ্রাসাহ শিক্ষার্থীরা, যে, লাঠি হাতে মন্দিরও পাহারা দিচ্ছে, তা তো ভারতীয় মিডিয়ায় আসে না? ওখানকার খেলা আপনারা বন্ধ করুন, যে ভাবে সদ্য ঘটে যাওয়া ইন্টারনেট-ওয়াই-ফাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
লুটতরাজ সহ সাজানো এ রকম সব কিছুর হেফাযৎ করা আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপরই বর্তায়। দিল ভুয়া-নামি ৩০ জন/৫০ জন আসামী। ছাত্ররা এগুলো করবে, এটা অন্তত বিশ^াস করা যায় না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, ভাংচুর, সবগুলোই এখন হবে ঐ সমস্থ দুষ্কৃতিকারিদের হাতেই, কারণ, অন্যদেরকে আসামি দিয়ে হলেও নিজেদেরকে তো বাঁচাতে হবে, এখন যেহেতু গড-ফাদাররা নেই। বাহিরে বের হওয়ার তো একটা ব্যবস্থা করতে হবেই। নিজেদেরকে সমাজের কাছে নিরপরাধ প্রমান করা তো আবশ্যক। কিন্তু বাংলদেশের মানুষ যে কতটা অসাম্প্রদায়িক, তা এ দেশে বসবাস না করলে বুঝা যাবে না।
আর, নবাগত সরকারকে আবারও অনুরোধ করছিঃ আপনারা ইতিহাস ভুলবেন না, ইতিহাসের অমর্যদা করবেন না, শোকাহত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য মোটা অঙ্কের আর্থিক বরাদ্দ মঞ্জুর করবেন দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে, আর সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিৎ করবেন প্রাণোচ্ছল তরুন আহতদের।
অধিকন্তু, ন্যায় বিচার সমাপ্ত করবেন যত দ্রæত সম্ভব। অপরাধিদের শাস্থি হবে দৃষ্টান্তমূলক, সে পুলিশ বা পেটুয়া - যে বাহিনীই হোক, আর, স্বৈরশাসকদের চুড়ান্ত শাস্থি তো হতে হবে বটেই।
অদ্য হতে গণতন্ত্রের চর্চা হবে ফ্রী এ্যাÐ ফেয়ার। দেশটা কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়, নবাগত সরকার এটা কার্যে প্রমান করে দেখাবেন। মানুষকে ভোট-মুখি করতে হবে। আমি দেখেছি, ভোটের সময় আর্মি-সেনাগণ কষ্ট করে মাঠে নামেন, আমি ভোট দিতে গেলে দেখি, গেইটে উনারা আমি-ভোটারকেই অটকান, অর্থাৎ, উনারা যেন গেইট সামলান, হয়ত উনাদেরকে ভেতরে যেতে দেয়াই হয় না, নিশ্চয় স্বৈরশাসকদের নিষেধ আছে; আর ভেতরে চলছে নিরাপদে সিল মারার মহাযজ্ঞ।
আর, দয়া করে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্বশাসনে হাত দেবেন না। সরকারের পা-চাটা ভি সি নিয়োগ না দিয়ে পÐিৎ ব্যাক্তিদেরকে ভি সি বানাবেন, কিম্বা পা-চাটা ব্যাক্তিও যদি পÐিৎ, সাহসী, সৎ, শিক্ষার্থী-বান্ধব এবং উন্নয়ন-কর্মে আপোষহীন হন, তা হলে তাঁকেও দিতে পারেন, যেমন, শাহজালালের বর্তমান দু’টার্মের ভি সি। আমরাই বি সি এস ক্যাডার পয়দা করি। সুতরাং আমাদেরকে তারা যেন উপদেশ দিতে না আসে। সরকারি সঙ্স্থাগুলোতে প্রমোশন হবে উচ্চতর ডিগ্রি ও কর্মযোগ্যতার ভিত্তিতে এবং সময় নিয়ে। দেখবেন, দুর্নীতি কমে যাবে।
আর, পাঠ্যক্রম প্রনয়ন? আমাকে ডাকলে আমিও আসব, বা সিলেটে বসেই এ কাজ করা যাবে। কারণ, ৪১ টা বছরই আমি পাঠ্যক্রম প্রনয়ন করেছি।
বøাসফেমি আইন পাশ করতে হবে, কঠোর থেকে কঠুর শাস্থির বিধানও উল্লেখ থাকবে।
খেক-শিয়ালের কছে যার ইচ্ছা, সে তিন কন্যা/পাঁচ কন্যা বিয়ে দেক; বাংলাদেশের অন্য কোন মানুষ অন্ততঃ এ গর্হিত কাজ করবেন না। বানরকে প্রশ্রয় দিলে সে মাথায় উঠেও নাচে, কবি হইলেই শিক্ষকের শির উঁচু করে দিয়ে বাদশাহ আলমগীকে ‘মহান’ আর ‘উদার’ বানানো যায় না। অন্ততঃ সুশিক্ষিতজন কথাগুলো স্মরন রাখবেন। এখন আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি নজরুলকেঃ
“বন্ধুগো, বড় বিষ-জ¦লা এই বুকে,
দেখিয়া-শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি,
তাই, যাহা আসে কই মুখে”।
পুত্র-কন্যা হারানো শোকাহত অভিভাবকগণকে/পরিবারবর্গকে কী-ই বা আছে শান্তনা দেয়ার জন্য। মহান অল্লাহ আপনাদেরকে চুড়ান্ত ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দান করুন এবং উত্তম থেকে অরও উত্তম বদলা দান করুন। আপনাদের সকলের সাথে এক হয়ে আমি আজীবনের এ ক্ষুদ্র শিক্ষক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। আর আপনাদের কষ্টের ও আদরের সন্তানগুলোকে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন ও তাদের আত্মত্যাগের কারণে, তাদের সাথে আল্লাহ আপনাদেরকেও জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন, এ দোয়া করি।
লেখক: প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও ২৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান, বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, ও দেশে-বিদেশে ৪6 বছরের ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক। বর্তমানে ভিজিটিং প্রফেসর, সিলেট সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সিলেট।